শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এমআরপি নিয়ে মহাসংকট

জুলকার নাইন

এমআরপি নিয়ে মহাসংকট

আগামী মঙ্গলবারের পর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি ছাড়া বিমানে ভ্রমণ করা যাবে না এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে মহাসংকট। নির্ধারিত সময়ের আর মাত্র চার দিন বাকি থাকলেও আরও ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৭টি যন্ত্রে এমআরপি দেওয়া বাকি খোদ সরকারি হিসাবে। বেসরকারিভাবে এ সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ বলে মনে করা হচ্ছে। চার দিনে এত বিশালসংখ্যক পাসপোর্ট ইস্যু করা অসম্ভব। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন প্রবাসীরা। কারণ এ সময়ের পর যাদের হাতে লেখা পাসপোর্ট থাকবে তারা বৈধ না অবৈধ বলে বিবেচিত হবেন, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। আর যারা এমআরপি বানাতে দেশে ফিরেছেন কিন্তু ভিসা আছে হাতে লেখা পাসপোর্টে, তারাও পড়েছেন সংকটে। ভিসা বা এনডোর্স ছাড়া নতুন এমআরপি নিয়ে ছুটিতে থাকা প্রবাসীরা কীভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। শুধু সৌদি আরবের পক্ষ থেকে সমস্যা না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অন্য দেশগুলোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, ২০১০ সালে সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব বাংলাদেশি নাগরিককে এমআরপি দেওয়ার জন্য প্রকল্প নিয়েছে। ৯ নভেম্বর পর্যন্ত দূতাবাসগুলো ২১ লাখ ১৫ হাজার ৯০১টি এমআরপি ইস্যু করেছে। আউটসোর্সিং কোম্পানি ইস্যু করেছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২২২টি। এ ছাড়া মিশনগুলোর প্রায় ৫৪ হাজার ৫৪০টি পাসপোর্ট বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরে মুদ্রণের অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে এখনো ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৭টি এমআরপি দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এমআরপি নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা ভর করেছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ায়। সৌদি আরবে ১২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিকে এমআরপি দেওয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ ইস্যু করা হয়েছে। বাকি এখনো ৫ লাখের বেশি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৮ লাখ এমআরপির বিপরীতে প্রায় ৭ লাখ দেওয়া হয়েছে। আরও ১ লাখ বাকি রয়েছে। মালয়েশিয়ায় ৫ লাখ এমআরপির মধ্যে আড়াই লাখের কাছাকাছি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি এখনো আড়াই লাখ। বিশ্বের অন্য দেশগুলোয় দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ দেওয়া হয়েছে। এখনো বাকি প্রায় ৩ লাখ। এ শঙ্কা থেকে প্রবাসীরা যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অন্তত দেশে ফিরতে পারেন এ জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে রাখার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবার হাতে এমআরপি তুলে দেওয়ার পরই প্রকল্প শেষ হবে।

জানা যায়, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্য আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) সঙ্গে ১৯৯৮ সালে এমআরপি চুক্তি করে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর ১২ বছরে এমআরপি দেওয়ার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে ২০১০ সালে শুরু হয় এমআরপি দেওয়ার প্রকল্প। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশে-বিদেশে প্রায় ১ কোটি এমআরপি ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ না হওয়ার শঙ্কা থেকেই চলতি বছরে কানাডার মন্ট্রিলে আইকাও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নির্ধারিত সীমা ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরের পরিবর্তে ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর করার আবেদন জানান। কিন্তু আইকাও প্রেসিডেন্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এমআরপি দেওয়ার সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। এখন আইকাওয়ের আর কিছু করার নেই। পরে আউটসোর্সিং কোম্পানি ছাড়াও বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশের ৬২টি মিশনে এমআরপি দেওয়ার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। যেখানে দূতাবাস নেই, সেখানকার প্রবাসীদের কাছাকাছি দেশে এসে পাসপোর্ট এমআরপি করে নিতে হচ্ছে। অবশ্য দূতাবাস না থাকা কোনো কোনো দেশে মোবাইল ইউনিট পাঠিয়েও পাসপোর্ট এমআরপি করা হচ্ছে। তবে অভিযোগ আছে, এ পরিস্থিতির পেছনে দায়ী স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনস্তাত্তি¡ক দ্বন্দ্ব। বিদেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশনগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে, তবে পাসপোর্ট-সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। প্রায় তিন বছর ধরে দুই মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্বে ধীরগতি ছিল পাসপোর্ট বিতরণে।

সাদা এমআরপি ও হাতে লেখা পাসপোর্টে ভিসা নিয়ে যাওয়া যাবে সৌদি আরবে : বর্তমানে ছুটিতে আছেন বা বাংলাদেশে এসে এমআরপি বানিয়েছেন এমন লক্ষাধিক প্রবাসী ২৪ নভেম্বরের পরেও ভিসা ও এনডোর্স ছাড়া সাদা এমআরপি নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের উপ-প্রধান মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ২৪ নভেম্বরের পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে ফেরার সময় হাতে লেখা ভিসা লাগানোর সঙ্গে সাদা এমআরপি নিয়ে প্রবেশ করা যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর