শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অনিশ্চিত হয়ে গেল জেলা পরিষদ নির্বাচন

গোলাম রাব্বানী

অনিশ্চিত হয়ে গেল জেলা পরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর জেলা পরিষদ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনে তোড়জোড় দেখা গেলেও এখন আর নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে দলীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অনির্বাচিত প্রশাসকরাই চালাবেন জেলা পরিষদ। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের পর ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানসহ পূর্ণাঙ্গ জেলা পরিষদ গঠন করার কথা থাকলেও আজও তা হয়নি। এমনকি দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করতে সংসদে যে বিল উত্থাপন হয়েছে, সেখান থেকে জেলা পরিষদ আইনটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এদিকে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেলা পরিষদে নির্বাচন না দেওয়াটা সংবিধানের লঙ্ঘন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারে দুই ধরনের বিধান থাকতে পারে না। জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যে কেউ আদালতে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে সরকারকে জবাবদিহি করতে হতে পারে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একাধিক সদস্য জানান, সোমবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিলটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। কমিটির আশঙ্কা, জেলা পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে এলাকার সংসদ সদস্যদের দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে কমিশন কিছু কাজ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন সারা পাওয়া যায়নি। তবে সংসদীয় কমিটি যেহেতু আইন সংশোধনের বিষয়টি বন্ধ রাখতে বলেছে, এক্ষেত্রে জেলা পরিষদ নির্বাচন ঝুলেই গেল বলা চলে। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জেলা পরিষদে নির্বাচন দিতে হবে। তবে নির্বাচন না দেওয়াটা সংবিধানের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে যে কেউ আদালতেও যেতে পারেন। তখন সরকারকে এ বিষয়ে জবাব দিতে হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন অনির্বাচিত ব্যক্তি দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করানো সঠিক নয়। এতে জবাবদিহি থাকে না। পূর্ণাঙ্গ জেলা পরিষদ করা সাংবিধানিক অঙ্গীকার। কিন্তু এটা না করায় সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এখন জেলা পরিষদের জন্য আলাদা বাজেট হচ্ছে, কিন্তু ব্যয় হচ্ছে অস্বচ্ছভাবে।  ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। তখন স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন পর‌্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। কিন্তু নির্বাচন করার কোনো উদ্যোগ এখনো নেই। আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। চেয়ারম্যান ও এই ২০ জন সদস্যকে নির্বাচন করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন (থাকলে), উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন একটি স্তর। স্থানীয় সরকারের অন্যান্য স্তরের সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের অনুরোধে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করে।

সর্বশেষ খবর