শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঢাকা চিড়িয়াখানায় ৩৩ প্রাণী মৃত্যুঝুঁকিতে

মোস্তফা কাজল

ঢাকা চিড়িয়াখানায় ৩৩ প্রাণী মৃত্যুঝুঁকিতে

অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতায় বেহাল রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা। একের পর এক প্রাণী মারা যাচ্ছে। বর্তমানে ৩৩টি প্রাণী রয়েছে মৃত্যুঝুঁকিতে। অনেক প্রাণীই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছে। হারিয়েছে চলাচলের সক্ষমতা। এই দুর্বল প্রাণিগুলোকেই খাঁচায় রাখা হয়েছে প্রদর্শনের জন্য। যা দেখে দর্শনার্থীরাও বিরক্তই হচ্ছেন। এ ছাড়া আবর্জনা আর দুর্গন্ধে চিড়িয়াখানায় আসা দর্শনার্থীদের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। চিড়িয়াখানায় পশু-পাখি দেখাশোনার জন্য রয়েছে লোকবল সংকট। যারা আছেন তারাও ব্যস্ত চিড়িয়াখানাকেন্দ্রিক নিজেদের ব্যবসা নিয়ে। অন্যদিকে, চিড়িয়াখানার পশুখাদ্য ক্রয়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। চিড়িয়াখানার ভেতরে দর্শনার্থীদের নানাভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হয়রানি করছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। গতকাল চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, দুপুরে কানাবকের জন্য নির্ধারিত জায়গায় সামান্য পানি থাকলেও নেই তেমন খাবার। বানরের খাঁচায় পাউরুটি, বাদাম, ফালি করা মালটা, কলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলোকে ঘিরে উড়ছে অগণিত মাছি। একটি খাঁচায় দুই সিংহ নিস্তেজ পড়ে আছে। তাদের সামনে দুটি বড় হাড়। এক কর্মচারী জানান, বাঘ ও সিংহকে হাড়ওয়ালা মাংস দিলে তারা খেতে চায় না জেনেও এদের হাড়ই দেয়া হয়। ইচ্ছে হলে হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে খায়। আবার না খেয়েও থাকে। অন্য আরেকটি খাঁচায় থাকা দুই বাঘের মধ্যে একটি নিস্তেজ হয়ে ঘুমাচ্ছে। বেশির ভাগ খাঁচার সামনেই বেশি সময় দাঁড়ানো যাচ্ছিল না দুর্গন্ধে। অনেক খাঁচা খালি। চিড়িয়াখানার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ দোকান। এসব দোকানে প্রতিটি পণ্যেই নেওয়া হচ্ছে চড়া মূল্য। গতকাল ১৫ টাকার মিনারেল ওয়াটার ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব দোকানি ও একটি সংঘবদ্ধ চক্রের যোগসাজশে দর্শনার্থীদের নানা হয়রানি করা হয়।

মৃত্যু ঝুঁকিতে ৩৩ প্রাণী : চিড়িয়াখানায় গত এক বছরে ১১ প্রাণী নানা কারণে মারা গেছে। ৩৩ প্রাণী বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছে। কয়েক মাস আগে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সম্রাট। পাশাপাশি সদ্য জম্ন নেওয়া বাঘ শাবক টোকিও গুরুতর অসুস্থ। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর চিড়িয়াখানায় জ্যোতির গর্ভে জম্ন হয় শাবক টোকিওর। জম্নের পর থেকে মায়ের দুধ পান করছে না। এ ছাড়া চিড়িয়াখানায় ৭৯ বছর বয়সী কুমির রয়েছে। কিন্তু সে নড়তে চড়তে পারে না। শুধু তার আকৃতির জন্যই দর্শকের ভিড় তার খাঁচার সামনে। হায়েনার অবস্থা জবুথবু। বয়স্ক প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে অলিভ বেবুন, বাগডাশা, ভোঁদড়, শঙ্খিনী সাপ, উটপাখি, কেশোয়ারি, সারস, লিলফোর্ড সারস, সাদা পেলিক্যান, মদনটাক (ছয়টি), ভারতীয় সিংহ, চিত্রা হায়েনা, ডোরাকাটা হায়েনা, কালো ভল্লুক, শিম্পাঞ্জি, নীলগাই, হাতি (কুসুমতারা) ও জলহস্তি। অতিরিক্ত বয়সের কারণেই এসব প্রাণীর শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বয়স্কদের মধ্যে অবস্থা খারাপ এমন পাঁচ থেকে ছয়টি প্রাণীকে রাখা হয়েছে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। এদের অনেকের দাঁত নেই। নেই হাঁটাচলার শক্তি, কয়েকটি প্রাণীর চোখও নষ্ট হয়ে গেছে। খাবার দিতে হয় গুঁড়ো করে। ফলে তাদের পরিচর‌্যা ও খাবার সরবরাহে নানা সমস্যা হচ্ছে। এদের দেখভালের জন্য কর্তৃপক্ষকে বাড়তি জনবল কাজে লাগাতে হচ্ছে। বয়স্ক ও অসুস্থ প্রাণির মধ্যে ঘড়িয়ালের বয়স ৩৬ বছর, সোনালি বুক বানরের বয়স ৩১ বছর। উটপাখির বয়স ২৬ বছর, মদনটাক ২৭-এ পা রেখেছে। ১৯ বছর বয়সী সিংহও অসুস্থ। শিম্পাঞ্জির বয়স ৩৬ বছর। জলহস্তির বয়স হয়েছে ৩৯ বছর। ২০ বছর বয়সী শঙ্খিনী সাপের অবস্থাও খারাপ।

দর্শনার্থীদের বক্তব্য : মানিকগঞ্জ থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন ইতালি প্রবাসী কামাল উদ্দিন। হাতে সময় কম বলেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসেছেন চিড়িয়াখানায়। তবে চিড়িয়াখানার অবস্থা দেখে মোটেও সন্তুষ্ট নন তিনি। তিনি আরও বলেন, সারা দিন চিড়িয়াখানায় ঘুরে তেমন কিছুই দেখতে পেলাম না। অনেক খাঁচা খালি। পশুপাখিগুলোও বেশির ভাগ ঘুমাচ্ছে।

কিউরেটরের বক্তব্য : জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা ৩৩টি প্রাণীর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। আমরা প্রতিদিন এদের দেখভাল করছি। এ ছাড়া চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর