বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাকা সাম্রাজ্যে হাল ধরবেন কে?

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

সাকা সাম্রাজ্যে হাল ধরবেন কে?

যুদ্ধাপরাধের দণ্ডে ফাঁসি হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর সাম্রাজ্যের হাল ধরবেন কে? তার রাজনৈতিক গ্রুপ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে কে আসছেন? এ প্রশ্নে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে। সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, নাকি ছোট ভাই ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন কাদের (গিকা) চৌধুরী হাল ধরছেন সাকার সাম্রাজ্যের। এ প্রশ্নেই মূলত সব জল্পনা-কল্পনা, বিশেষ করে তার নিয়ন্ত্রিত ফটিকছড়ি সংসদীয় এলাকায়। সাকার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার দিন লাশ দাফন করতে না করতে সেদিন সকালেই ছেলে হুম্মামের সংবাদ সম্মেলন ও সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের গুডস হিলে সাকা পরিবারের সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘রাজনৈতিক অভিব্যক্তির অস্তিত্ব খুঁজছেন অনেকেই। রাঙ্গুনিয়ায় দাফনের জন্য সাকা চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা পূরণে সরকারি বাধার অভিযোগ থেকে যেমন, তেমনি বাবা মরহুম জননেতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরী ও ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরের পাশেই সাকা চৌধুরীর লাশ দাফনের বিষয়টিকে রাউজানের রাজনীতিতে ‘উত্তরাধিকারের তাৎপর্যের ইঙ্গিত’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে সাকা চৌধুরীর জানাজায় ছোট ভাই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী অংশ না নেওয়ায়, এমনকি দাফনের দুই দিন পর গতকাল পর্যন্ত ভাইয়ের কবরে না যাওয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। গিকা চৌধুরী অবশ্য পরশু জামায়াত-শিবিরবেষ্টিত চট্টগ্রাম শহরের প্যারেড ময়দানে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গতকালও সাকার স্ত্রী-সন্তানরা কবর জিয়ারত করেছেন। গত দুই দিনে শোকাহত সাকা পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তার বাড়িতে যান সন্দ্বীপের সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশা, চাকসুর সাবেক ভিপি এস এম ফজলুল হক, কোতোয়ালি-বাকলিয়া সংসদীয় আসনের ২০০৯ নির্বাচনের বিজিত প্রার্থী শিল্পপতি শামসুল, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী। অন্যদিকে সাকার ফাঁসিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জোটে বিজয় আনন্দ অব্যাহত রয়েছে।

সাকা চৌধুরী শুধু একাত্তরের মানবতাবিরোধী হিসেবে নয়, মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রায় চার দশকে তার বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে। জাতীয় পার্টির ক্ষমতাকালে সাকা চৌধুরী হন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কালে হন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। সে সময় ওআইসির মহাসচিব পদে নির্বাচনে অবশ্য হেরে যান। চট্টগ্রামের বহুল বিতর্কিত সন্তান সাকা চৌধুরী তার রাজনৈতিক আঁতুড়ঘর থেকেই অঘটনঘটনপটীয়সী। বাবার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলিম লীগের রাজনৈতিক ঔরশে জ নেওয়া সাকা কখনো এনডিপি, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র হয়ে সর্বশেষ বিএনপি সমর্থিত সংসদ সদস্য হন। টানা ছয়বারের এই সংসদ সদস্যের দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর পর যুদ্ধাপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে যেমন, তেমনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টিও তার ‘রাজনৈতিক পরাজয়’ বলে মনে করছেন অনেকে। অবশ্য একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সাকার প্রথম পরাজয় ঘটেছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রত্যক্ষদর্র্শীদের মতে, শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেই মানবতাবিরোধী অপরাধ করেননি সাকা চৌধুরী, স্বাধীন বাংলাদেশেও তার বাহিনীর প্রতাপ ছিল দোর্দণ্ড। চট্টগ্রামের তিন উপজেলা রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ির ৪৬টি ইউনিয়ন জুড়েই সাকা বাহিনীর উৎপাত-উপদ্রব আর বিভীষিকায় সনাতনীদের স্বস্তি ছিল না।

সর্বশেষ খবর