রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রেসক্রিপশন দেওয়াই দায়িত্ব রায়গঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

প্রেসক্রিপশন দেওয়াই দায়িত্ব রায়গঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের

৫৫ বছরের সুফিয়া খাতুন। কিছুদিন ধরে শরীর ভালো যাচ্ছিল না। তাই এসেছিলেন রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আমিমুল এহসান তৌহিদ তখন বলেন, ‘ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে’। কিন্তু প্রেসক্রিপশনে লিখে দিলেন, রক্ত পরীক্ষা এবং এক্স-রে করতে হবে। হাসপাতালে যেহেতু রক্ত পরীক্ষা ও এক্স-রে করা যায় না, সেহেতু কমপ্লেক্সের অদূরে ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বার ও ক্লিনিক ‘মোহনা ডায়াগনস্টিকে’ যেতে হলো। তারপর ৫০০ টাকা দিয়ে পরীক্ষাগুলো করতে হয়েছে। এটা ছিল গত বুধবারের ঘটনা।   একই ঘটনার কথা জানা গেল, চিকিৎসা নিতে আসা এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া আরও অনেকের কাছে। পিনজিরা খাতুন, সুলতান মাহমুদ, ফতেহা খাতুন ও ফিরোজ আলী জানালেন, পেট ব্যথা-পা ভাঙা থেকে শুরু করে যে কোনো রোগের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এলেই চিকিৎসকরা রোগীকে এক্স-রে, আলট্রাসনো, রক্ত পরীক্ষার জন্য প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছেন। পরীক্ষাগুলো যেহেতু হাসপাতালে করানোর ব্যবস্থা নেই, সেহেতু এর জন্য যেতে হচ্ছে এসব ডাক্তারদের চেম্বার বা ক্লিনিকে। আর প্রতি টেস্টের জন্য গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে হাজার টাকা। ধারণা পাওয়া গেছে, রায়গঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে শুধু প্রেসক্রিপশন ছাড়া অন্য কোনো সেবাই পাচ্ছে না রায়গঞ্জবাসী। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের কাছে রোগী গেলেই তিনি শুধু টেস্ট লিখে দেন। বাইরে থেকে টেস্ট করতে হচ্ছে। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য ক্লিনিকে চিকিৎসকের সংকট না থাকলেও রয়েছে চিকিৎসাসেবা সংকট। এ ছাড়াও সকাল থেকে বিভিন্ন কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভরা ডাক্তারদের ঘিরে বসে থাকেন। তাদের সামনে সব সমস্যার কথা বলতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বিব্রতবোধ করেন। শুধু তাই নয়, সামান্য একটু মাথা ফাটলেও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনায় পা ভেঙে স্বাস্থ্য কমপ্লেকে ভর্তি থাকা ফিরোজ আলী জানান, এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা সব তিনি বাইরে থেকে করিয়েছেন। ডাক্তাররা যে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন তার সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। মাঝে মধ্যে দু-একটি ট্যাবলেট অবশ্য খেতে দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিত্য গোপাল জানান, এক্স-রে মেশিন সাত বছর ধরে নষ্ট হয়ে আছে। অনেকে লেখালেখি করেও কোনো কাজ হয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলট্রাসনো মেশিন নেই, রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনীয় মেডিসিন নেই। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, এমনিতে বাইরে থেকে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দেখতে দারুণ। অত্যাধুনিক ঝকঝকে নতুন ভবন । সঙ্গে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট পুরনো ভবন। চিকিৎসক রয়েছেন পর্যাপ্ত। সঙ্গে আছে নার্স-আয়া, ওয়ার্ডবয়-অফিস সহকারী-মালি ও নাইট গার্ড। রয়েছে প্যাথলজি বিভাগ ও এক্স-রে মেশিন। কিন্তু নেই শুধু চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসকরা সবাই হাপসাতালের গেটে অবস্থিত চেম্বারে রোগী দেখে সময় পার করেন। সামান্য কেটে গেলেও নামমাত্র সেলাই করে ‘অবস্থা খারাপ’ বলে পাঠিয়ে দেন জেলা সদর, বগুড়া বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জানা গেছে, হাসপাতালের নতুন বেড ও বিছানাপত্রগুলো নিয়ে নিজেদের ডরমেটরিতে ব্যবহার করছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে সবাই হাসপাতালের গেটে প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন। প্রত্যেকে সকাল ১০টায় একবার হাসপাতালের আউটডোরে প্রবেশ করেন, আবার ১১টার মধ্যেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। চিকিৎসকদের দেখাদেখি অন্য স্টাফরাও নিজ নিজ রুম তালা দিয়ে চলে যান। ফাঁকা হয়ে যায় পুরো হাসপাতাল। গত মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসক, একজন সহকারী ও ওয়ার্ডে একজন নার্স ছাড়া কাউকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিতে গিয়ে এদিন দেখা যায়, হাসপাতাল থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে যমুনা প্যাথলজিতে রোগী দেখছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শিমুল তালুকদার, জনতা প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. মাসুদ রানা বাদল ও ডা. ওয়াসিম কুমার সরকার, গ্রিন লাইফ প্যাথলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রমিজুল ইসলাম ও সজীব কুমার। তারা প্রতিদিনই এভাবে এসব সেন্টারে বসেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেউ ভর্তি হতে চায় না।

সর্বশেষ খবর