শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

নার্সারি ও মাছ চাষে মডেল আলফাজুল

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

নার্সারি ও মাছ চাষে মডেল আলফাজুল

নার্সারি ও মাছ চাষ করেই ভাগ্য বদলে ফেলেছেন আলফাজুল আলম। তিনি এখন নাটোরের ‘মডেল’। তার সহযোগিতা ও পরামর্শে অনেক বেকার যুবক গড়ে তুলছেন নার্সারি। অনেকে আবার আধুনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির হাইব্রিড মাছের চাষ করেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন। শহরের নীচাবাজার এলাকার তমিজ উদ্দিন কন্ট্রাক্টরের বড় ছেলে আলফাজুল প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে শহরতলির একডালায় ছোট এক চিলতে জমি কিনে বসবাসের পাশাপাশি সারের ব্যবসা শুরু করেন। কিছু দিন পর তিনি একডালায় এবং পরে বড়ভিটার পুকুরে সরকারি জলাশয় লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। প্রথমেই এতে সাফল্য অর্জন করেন। পরে পুকুরের লিজ বাতিল হয়ে গেলেও তিনি একডালা ভাটা পুকুরে ২০ বিঘা ও জলারকান্দিতে ১৬ বিঘার জলাশয় লিজ নিয়ে পুনরায় মাছ চাষ শুরু করেন। একই সঙ্গে বাগাতিপাড়ার তমালতলায় জোগিপাড়ায় ১৯ বিঘা, নাটোর শহরের আলাইপুরে ২৩ বিঘা, সদর উপজেলার বাকশোঘাটে ৪১ বিঘা ও তেবাড়িয়া রেলগেটে রেলের প্রায় ২০ বিঘা জমিতে নার্সারি এবং ফলের বাগান তৈরি করেন। এসব বাগানে আপেলকুল, থাইকুল, বাওকুল, থাই পেয়ারা, কাজি পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, এলাচি লেবু, কলম্বো লেবু, চায়না লেবু, বেদানা ও ড্রাগনসহ অনেক ধরনের দেশি-বিদেশি ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন। শুরুতে কুল ও পেয়ারা চাষে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ার পর এখন উন্নত জাতের লেবু, বেদানা ও ড্রাগন ফল চাষে সাফল্য পাচ্ছেন। এবারই প্রথম তিনি বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন। প্রতি কেজি ড্রাগন তিনি তার বাগান থেকেই ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বিদেশি এ ফলের চাহিদা দেখে তিনি এর আবাদ বাড়িয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি শহরতলির তেবাড়িয়ায় গাছের চারা সংগ্রহের জন্য নার্সারি গড়ে তুলেছেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ফল ব্যবসায়ীরা এসে বাগান থেকেই ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আলফাজুলের ভাষ্য অনুযায়ী, চার লাখ টাকা দিয়ে তিনি যে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, আজ তা থেকে কোটি টাকার সম্পদ হয়েছে। এসব করে তিনি গত ৩০ বছরে তাক লাগানো সাফল্য অর্জন করেছেন। জানা গেছে, আলফাজুল আলম নিজেকে একজন ভূমিহীন দাবি করলেও মাছের পুকুর এবং নানা জাতের ফলের নার্সারি ও বাগান করেছেন প্রায় দেড়শ’ বিঘা জমিতে। যেসব জমির পুরোটাই লিজের। দিন দিন ফলের বাগান ও পুকুরে মাছ চাষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। নাটোরের বিভিন্ন এলাকার মোট ছয়টি পয়েন্টে এসব প্রকল্পে দৈনিক কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক। শ্রমিকের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ মহিলা এবং বেশ কজন প্রতিবন্ধীও রয়েছেন।

আলফাজুল জানান, তার হাতে কলমে বা পুঁথিগত কোনো প্রশিক্ষণ নেই। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে আর সরকারি দফতরে গিয়ে তাদের পরামর্শ নিয়ে নিজেই সবকিছু করছেন। আলফাজুল জানান, নাটোরের অনেক মাছ চাষি আধুনিক পদ্ধতিতে গভীর পুকুরে হাইব্রিড বিদেশি কই মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু কেউ তার মতো সফলতা পাননি। তিনি ১৫-১৬ ফুট গভীর পুকুরে বিদেশি কই মাছ চাষ করে বিঘাপ্রতি ৬০ মণ ফলন পেয়েছেন; যা উৎপাদনের দিক দিয়ে এ অঞ্চলের রেকর্ড। তার এসব কৃষি প্রকল্প নিবিড়ভাবে পরিচর‌্যা করার জন্য আমেরিকা-প্রবাসী ছোট ছেলে আখেরুল আলমকে দেশে ফিরিয়ে এনে বড় ছেলে আতিকুল আলম ও ছোট ভাই শহীদুল আলমকে সম্পৃক্ত করেছেন। পরিবারের সবাই মিলে এ কৃষি প্রকল্পগুলো দেখাশোনা করছেন।

সর্বশেষ খবর