সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
সেই ছাত্রনেতাদেও চোখে গণঅভ্যুত্থান

আজও হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরছি : খোকন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজও হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরছি : খোকন

১৯৯০ সালে আমরা যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম তার চেয়ে আরও ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারের কবলে এখন দেশ। আর এ সরকারের হাতের পুতুল হলো সেই স্বৈরাচার এরশাদ। টানা ৯ বছর রাষ্ট্রপতি থাকলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর  বিশেষ দূতের চাকরি নিয়েছেন তিনি। সরকারের অংশীদারও হলো তার পার্টি। এটা আসলে সমগ্র জাতির সঙ্গে এই সরকারের প্রতারণা। ভন্ডামী ছাড়া আর কিছুই নয় এটি। নব্বইয়ে যে গণতন্ত্রের জন্য জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে আন্দোলন করেছিলাম, মাথায় হুলিয়া নিয়ে ফেরারি হয়ে ঘুরেছিলাম মাসের পর মাস, তার ঠিক ২৫ বছর পর আজ আবারও একই কারণে হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে আমাকে। বরং বর্তমান সময়ে মামলা-হামলার আরও ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছেন বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনগণ। কথাগুলো বলছিলেন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের তুখোড় ছাত্রনেতা, ডাকসুর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে কোনো মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। এমনকি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও আজ ভূলুণ্ঠিত। বিরোধীদলসহ ভিন্নমতের মানুষের উপর চলছে অত্যাচারের স্টিম রোলার। কিন্তু এ অবস্থার জন্যে তো আমরা এত ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আজকের এই অবস্থার জন্যে আমরা নব্বইয়ের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করিনি। আমরা সেদিন আন্দোলন করেছিলাম গণতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভের আশায়। যেখানে ভোটাধিকার থেকে শুরু করে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সব মৌলিক অধিকার ভোগ করবে এ দেশের জনগণ। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। খায়রুল কবির খোকন বলেন, দেশে আজ বিন্দুমাত্র গণতন্ত্র নেই, মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত। দীর্ঘ ৯ বছরের আন্দোলনে স্বৈরাচারমুক্ত দেশ পেলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আবারও আন্দোলন করতে হচ্ছে আমাদের। তিনি বর্তমান প্রধানন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সময় দ্রুত চলে চাচ্ছে। পরে আর সে সুযোগও হয়তো পাওয়া যাবে না। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় আগামীদিনে জনবিস্ফোরণ এমনভাবে ঘটবে যা নব্বইয়ের চেয়ে আরও ভয়ানক হতে পারে। দেশের বর্তমান অবস্থার উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আসলে বিনা ভোটের সরকার হলে যা হয় আর কী। জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা কিংবা জবাবদিহিতা থাকে না। এজন্যে দেশে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চারিদিকে গুম, হত্যা, সন্ত্রাস, দখলবাজি থেকে শুরু করে এহেন কোনো অপরাধ নেই যা হচ্ছে না।

সরকারি দলের লোকেরা ফ্রি স্টাইলে লুটপাট, দখল, অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে। আর মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী তথা সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে দেশে আজ জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গণতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরতন্ত্র কায়েমের সুযোগে দেশ-বিদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলোও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের আয়োজনের মাধ্যমে তিনজোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর সরকারকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় দেশও বাঁচবে না, মানুষও বাঁচবে না।

সর্বশেষ খবর