সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্যারিসে রেস্টুরেন্ট বার, নাইটক্লাবে কমেছে পর্যটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্যারিস থেকে

একটি মাত্র ঘটনা বদলে দিয়েছে প্যারিসের জীবনযাত্রা। শিল্প-সংস্কৃতির এ শহরকে এখন চেপে ধরেছে উদ্বেগ আর আতঙ্ক। পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে শহরটি। তবে সাদা চোখে দেখলে যে কারোরই মনে হবে, সবই স্বাভাবিকভাবে চলছে। তার পরও কোথায় যেন একটা অজানা ভয় তাড়া করে ফিরছে প্যারিসে বসবাসকারী নাগরিকদের, সে স্থানীয় হোক বা অভিবাসী। এ ভয়-আতঙ্ক এখন পরিষ্কারভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলেছে। প্রায় এক মাস ধরে মন্দা যাচ্ছে প্যারিসের রেস্টুরেন্ট, বার, কফি শপ ব্যবসায়।

গভীর রাতে যেখানে সুরের মূর্ছনায় রেস্টুরেন্টগুলোয় আড্ডা চলত বিরতিহীনভাবে, সেখানে এখন রীতিমতো শূন্যতা বিরাজ করছে। কোথাও কোথাও সুনসান নীরবতা। রাত ১০টার পর হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফি শপ, বার, নাইট ক্লাব সর্বত্রই লোকজনের আনাগোনা আর উপস্থিতি কমে গেছে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায়। ব্যবসা-বাণিজ্যে এতটাই মন্দা শুরু হয়েছে যে, এখন কর্মচারীদের বেতন আর ঘর ভাড়া পরিশোধ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীদের জন্য। গত দুই দিন প্যারিসে বিভিন্ন পর‌্যায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। প্যারিসে প্রায় চার দশক ধরে বসবাস করছেন ঢাকার এনায়েত উল্লাহ ইনু। ধনাট্য ব্যবসায়ী। তার একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। যার মধ্যে কফি বার আছে একাধিক। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলছিলেন, ১৩ নভেম্বর প্যারিসে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের বর্বরতম সন্ত্রাসী হামলার পর রেস্টুরেন্ট আর কফি শপ ও বারগুলোয় ব্যবসা একেবারেই কমে গেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী জানুয়ারিতে নিশ্চিত অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে হবে। সোমবার রাতে প্যারিসের লা ডি ক্লিসিওতে নিজের কফি শপ ক্যাপে ডি লুনায় বসে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন রাত মাত্র সাড়ে ১০টা। দেখেন এখানে কোনো কাস্টমার নেই। রাস্তাঘাটেও লোকজন নেই খুব একটা। অথচ এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। ১৩ নভেম্বরের পর থেকে এভাবেই চলছে ব্যবসা। প্যারিসের প্রাণকেন্দ্রে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত লা গার্দ নর্দে গত রাতে কথা হলো শহিদুল, রুহুল, বাবু, আজম, শিমুলসহ বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাঙালি যুবকের সঙ্গে। তারা প্রত্যেকেই কাজ করেন রেস্টুরেন্টে বা কফি বারে। কিন্তু ১৩ নভেম্বরের পর থেকে তাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে চলছে মন্দা। শহিদুল জানালেন, তিনি এক ইসরায়েলির রেস্টুরেন্টে শেফের কাজ করেন। কয়েক দিন ধরেই সেখানে কাস্টমার কম। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেখানে ভিড় লেগে যেত তরুণ-তরুণী, মধ্য বয়সী কিংবা তার চেয়েও বেশি বয়সী মানুষের; যারা গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতেন আর মদের পেয়ালায় কিংবা কফির কাপে চুমুক দিতেন আয়েশি ভঙ্গিতে তারাই এখন সন্ধ্যারাতে বাড়ি ফিরে যান অজানা আতঙ্কে। আরেক যুবক রুহুল জানালেন, প্যারিস হচ্ছে পর্যটকের শহর। বছরের ১২ মাসই এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকের উপস্থিতি লেগে থাকত। এক কথায় পর্যটকরাই এ শহরের প্রাণ। কিন্তু ১৩ নভেম্বর গার্দ নর্দের অদূরে লা রিপাবলিকের কাছে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার পর ভয় আর আতঙ্কে পর্যটকরা দ্রুত প্যারিস ছেড়ে চলে যান। এখন বলতে গেলে পর্যটকশূন্যই হয়ে পড়েছে পুরো শহর।

সর্বশেষ খবর