সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বেসরকারি উদ্যোগে ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল, ব্যয় কমছে ৬০ শতাংশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বদলে যাচ্ছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা

রাজধানীর অদূরে নির্মিত পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বদলে যাচ্ছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। যানজট, পরিবহন সংকটসহ নানা ঝামেলা এড়াতে সড়কপথের পরিবর্তে নৌপথের দিকে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। আর দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথ কার্যকর করতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও। রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত নদীগুলোর তীরে গড়ে তোলা হচ্ছে ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিটি)। শিগগিরই এসব আইসিটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

সরকারি উদ্যোগে ঢাকার অদূরে পানগাঁও আইসিটি নির্মাণ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা এবং মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর তীরে গড়ে উঠছে একাধিক বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিটি)। এর মধ্যে ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে চালু হতে যাচ্ছে দুটি বেসরকারি আইসিটি। এসব আইসিটিকে ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে বৃহত্তর ঢাকার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে যেমন আমদানিকৃত পণ্য পরিবহন করা হবে, তেমনি রপ্তানিপণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে সহজে পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। জানা গেছে, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে। বছরে ১৮ লাখ টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইকুইভেলেন্ট) কনটেইনার পণ্য হ্যান্ডলিং করে চট্টগ্রাম বন্দর। হামবুর্গ পোর্ট কনসাল্টিং রিপোর্ট অনুসারে ২০২০ সালে বন্দরের ২০ ফুট সমপরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে। তখন সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে এত বেশি কনটেইনার পরিবহন সম্ভব হবে না। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বাড়লে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কপথ ওই পণ্য পরিবহনের চাপ নিতে সক্ষম হবে না। তাই সহজে পরিবহনের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথ কার্যকর করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয় তার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ঢাকায় বা তার আশপাশের শিল্পাঞ্চলে যায়। যানজট, সড়কে আটকে থাকা, দুর্ঘটনা এবং ব্যয়বহুল রাস্তা মেরামত সব কিছুই সড়ক পরিবহনের জন্য হয়ে থাকে। সরকার এটি অনুধাবন করে নৌপথে কনটেইনার পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাহাজে একসঙ্গে অনেক বেশি পণ্য পরিবহনের সুযোগ থাকায় এটি ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সড়কপথে ট্রাকে করে পণ্য পরিবহনে যে পরিমাণ ভাড়া গুনতে হয় নৌপথে সেটি অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর জাকিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নৌপথে পণ্য পরিবহন উত্সাহিত করতে ঢাকার চারপাশে ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল গড়ে উঠছে। এর ফলে সড়কপথে চাপ কমবে এবং ব্যবসায়ীরাও সাশ্রয়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবেন। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত বেসরকারি উদ্যোগে চারটি আইসিটি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল বিডি নামে প্রতিষ্ঠান একটি আইসিটি নির্মাণ করছে। বেসরকারি উদ্যোগে একে খান অ্যান্ড কোম্পানি ঘোড়াশালে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে তুলছে নৌ টার্মিনাল। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে ধলেশ্বরী নদীর তীরে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আইসিটি। এ ছাড়া রূপায়ন পোর্ট অ্যান্ড লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেড নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমোদন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দর সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে আইসিটি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করেছে। রূপায়ন পোর্টের এমডি ক্যাপ্টেন পি জে উল্লাহ সম্প্রতি বলেছেন, এরই মধ্যে টার্মিনাল জেটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ২৭ একর জমির ওপর তাদের আইসিটি নির্মাণ হচ্ছে।

এ বন্দরের মাধ্যমে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টিইইউস কনটেইনার পরিবহন করা যাবে। আইসিটি ব্যবহার করে নৌপথে পণ্য পরিবহনের ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যয় প্রায় ৬০ শতাংশ কমবে। জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে কনটেইনার পরিবহনের জন্য ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে জাহাজ সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ৩টি জাহাজ এবং মেসার্স কাস্টস্ট্রিম লজিস্টিকস একটি কনটেইনার জাহাজ সংগ্রহ করেছে, যা বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহন করছে। ২৪টি জাহাজ নির্মাণাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন ছাড়াও ট্রানজিট সুবিধায় আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনে নৌপথকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি আইসিটিগুলোর ভূমিকা থাকবে সবচেয়ে বেশি। এসব আইসিটির মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ আশুগঞ্জ থেকে চাঁদপুর হয়ে বরিশাল পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নৌপথ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর