সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আশার আলো দেখাচ্ছে প্যারিস চুক্তি

নিজামুল হক বিপুল প্যারিস থেকে

আশার আলো দেখাচ্ছে প্যারিস চুক্তি

কোপেনহেগেন থেকে প্যারিস। মধ্যে ডারবান, দোহা, ওয়ারশো, লিমা এবং সর্বশেষ প্যারিস। টানা পাঁচ বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখা, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা, জলবায়ু তহবিল, অভিযোজন, মিটিগেশন, লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে দেন-দরবার চলেছে শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দরিদ্র, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা স্বল্পোন্নত ও দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে। অবশেষে প্যারিস সম্মেলনের মেয়াদ একদিন বাড়িয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে পেরেছে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ। বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোরে এবং স্থানীয় সময় শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সব দেশ প্যারিস চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে। যদিও এই চুক্তি নিয়ে খুব একটা আশান্বিত হতে পারছেন না বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা। তারপরও একটা চুক্তি হয়েছে তাতেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যারিস চুক্তি এখন আশার আলো দেখাচ্ছে। এখন এই চুক্তির আলোকেই ধনী ও শিল্পোন্নতদেশগুলো নিজ নিজ উদ্যোগে নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী এই চুক্তি কার্যকর করতে ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে শিল্পোন্নত দেশগুলো গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনতে কাজ করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের সম্মেলনের বড় প্রাপ্তি হচ্ছে আমরা একটা চুক্তিতে পৌঁছতে পেরেছি। যা পাঁচ বছর আগে হওয়া উচিত ছিল। কোপেনহেগেনে এই চুক্তি হলে আমরা এখন অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। বর্তমানে যে চুক্তি হলো সেটি আগামী পাঁচ বছর পর বাস্তবায়ন শুরু হবে। বাংলাদেশ দলের সমন্বয়কারী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা বৈঠকের পর অবশেষে শিল্পোন্নত ও স্বল্পোন্নত এবং জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো একটি চুক্তিতে পৌঁছতে পেরেছে— এটাই আশার কথা। তিনি বলেন, চুক্তিতে অনেক বিষয় অস্পষ্ট আছে— তারপরও বলব, যেটা হয়েছে সেটা অনেক ভালো। এ কারণেই যে, এটা হওয়া উচিত ছিল কোপেনহেগেনে। তাহলে এখন সেটা বাস্তবায়ন শুরু হতো। কোপেনহেগেন থেকে শূন্য হাতে না ফিরলে আজ আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। তিনি বলেন, তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার বিষয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলো একমত হয়েছে। এখন সেটা কার্যকর করতে তারা কাজ করলেই ভালো। অভিযোজনের বিষয়ে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো বলেছে তারা দরিদ্র ও দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতা করবে। এই চুক্তির বিষয়ে আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের প্রধান ডায়না লিভারমেন বলেন, প্যারিস চুক্তি এবারের সম্মেলনের জন্য একটি মর্যাদাকর সমাপ্তি। কিন্তু এর ভিতরে আশা ব্যঞ্জক তেমন উপাদান নেই। কারণ এটি কার্যকর হতে হতে আমাদের আরও মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে। বিশেষ করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের যে পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে, ততদিনে পৃথিবীব্যাপী আরও বিপুল পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষতিকর কার্বন নির্গত হবে। তখন আজকের প্রেক্ষাপটের তুলনায় এই চুক্তির কার্যকারিতা অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়বে। ইউএনইপি’র গবেষক জইরি রোজেলস চুক্তির আর্টিকেল চার-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, এই ধারাটি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমরা পিছনে কী ছিলাম। বিশেষ করে এটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। যার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা সহজ হবে।

এই গবেষকের মতে, কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণে আমাদেরকে প্রযুক্তির ওপরে আগের চেয়ে অনেক বেশি জোর দেওয়ার বিষয়টি ধরিয়ে দিয়েছে। নেতিবাচক প্রযুক্তি যত কম ব্যবহার করা যাবে, তত আমরা তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রিতে রাখতে সক্ষম হব।

তবে অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক হেলেন জোক চুক্তিটিকে অনেকটা ফাঁকা বুলি বলে উল্লেখ করে বলেছেন, এর ভিতরে উষ্ণতা বৃদ্ধিকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের মতো পর্যাপ্ত কোনো উপাদান রাখা হয়নি। বরং পুরো বিষয়গুলোকে ভবিষ্যতের কাছে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর