সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অকেজো এনজিওগ্রাম মেশিনই চট্টগ্রাম মেডিকেলের ভরসা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অকেজো এনজিওগ্রাম মেশিনই চট্টগ্রাম মেডিকেলের ভরসা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হূদরোগীদের জন্য রয়েছে ১২ বছরের পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ এনজিওগ্রাম মেশিন। এই অকেজো মেশিনই হাসপাতালের ভরসা। এ মেশিনে প্রিন্ট দেওয়া ছবি আসে ঝাপসা। স্ক্রিনেও ছবি ভালো করে দেখা যায় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চমেক হাসপাতালের হূদরোগ বিভাগে ২০০৪ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি এনজিওগ্রাম মেশিন আনা হয়। এ রকম একটি মেশিনে টানা সর্বোচ্চ ৫ বছর ভালোভাবে কাজ করা যায়। এরপর থেকে মেশিনে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। সেখানে এই মেশিনটির  বয়স বর্তমানে ১২ বছর। ফলে হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করতে চিকিত্সকদের যারপর নাই সমস্যায় পড়তে হয়। অলটারনেটিভ আর কোনো মেশিন না থাকায় মেরামত করে পুরনো মেশিন দিয়েই কাজ করা হয়। কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে বলেন, এনজিওগ্রাম মেশিনটির জন্য নানা সমস্যায় পড়তে হয়। প্রিন্ট করা ছবি ধুসর আসা, কাজে বিলম্ব হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষ করে এখানকার ফিল্ম যখন রোগীরা দেশের বাইরে নিয়ে যান, তখন ওই দেশের চিকিত্সকরা ফিল্ম দেখে আমাদের দেশ সম্পর্কে  নেতিবাচক মন্তব্য করার সুযোগ পান। এতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়। তবে তিনি বলেন, এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন একটি এনজিওগ্রাম মেশিন অনুমোদন দিয়েছে। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ করার পর সেটি এখানে স্থাপন করা হবে। আমরা চাই দ্রুতই মেশিনটি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হোক। খোঁজ নিতে গিয়ে এই হাসাপাতালের নানা সমস্যার কথা জানা গেছে। হূদরোগ বিভাগে শয্যা সংকট চরমে। ওয়ার্ডে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা ৮৩টি, কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন ২০০ থেকে ২২০ জন। দৈনিক নতুন রোগী ভর্তি হন ৪০ থেকে ৫০ জন। শয্যা সংকটের কারণে অনেক রোগীকে মেঝেতে ও বারান্দায় চিকিত্সা নিতে হয়। ওয়ার্ডে রয়েছে ১৬ বেডের কারোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও ১৫ বেডের পোস্ট করোনারি কেয়ার ইউনিট। হূদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম মনজুর মোরশেদ বলেন, জনবল ও শয্যা সংকট দীর্ঘদিনের। তারপরও আমরা নানাভাবে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ এখানে যে সব রোগী আসেন তাদের বাইরে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিত্সা নেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। তাই ওয়ার্ডে শয্যার বাইরে মেঝে ও বারান্দায় রোগী ভর্তি করে চিকিত্সা সেবা দেওয়া হয়। চিকিত্সকদের অভিযোগ, হূদরোগ বিষয়ক একটি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টাই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক থাকতে হয়। এটি এমন একটি  রোগ- যার জন্য জরুরি ও তাত্ক্ষণিক সেবা পেতে হয়। তাত্ক্ষণিক প্রয়োজনীয় চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত করা না গেলে রোগী মারাও যেতে পারেন।

এমন একটি ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নেই। তাছাড়া ওয়ার্ডে চিকিত্সা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। বর্তমানে অধ্যাপক পদ আছে ২টি, সহযোগী অধ্যাপক পদ ২টি, সহকারী অধ্যাপক পদ ৭টি, কনসালটেন্ট পদ ২টি। হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কার্ডিওলজি বিভাগে দৈনিক ৫টি এনজিওগ্রাম করা হয়। তবে মেশিন ভালো থাকলে কাজ বেশি করা যেত। এরই মধ্যে ১১৬ জন রোগীর রিং বসানো হয়েছে। এনজিওগ্রাম করা হয়েছে ৪ হাজার ৯০১টি। তাছাড়া স্থায়ী পেসমেকার করা হয়েছে ৩৮৮টি এবং অস্থায়ী পেসমেকার বসানো হয়েছে ৬৩৩টি।

সর্বশেষ খবর