মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা বাড়ছেই

মানিক মুনতাসির

নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বেড়েই চলছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে লোকসানি শাখার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এসব শাখাকে যে কোনো উপায়ে লাভজনক করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০টি। তার আগে চলতি বছরের শুরুতে এমন শাখা ছিল মাত্র ১৭৫টি। আর বর্তমানে এর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় মার্চের মধ্যে এসব শাখাকে লাভজনক করতে সময় বেঁধে দিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চারটি ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল মাত্র ১২১টি। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক চারটির লোকসানি শাখা দাঁড়ায় ২৯৬টিতে। আর বছর শেষে তা ৫০০টিতে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ১৩৪টি। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১৮২। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২৬৫টি। এসব ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাচ্ছে। ফলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আদায় কমছে, অন্যদিকে কমছে শাখাগুলোর সেবার মান। জানা গেছে, সরকারের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ৩৫ ও ২০১৬ সালের মধ্যে ৩০টিতে নামিয়ে আনার কথা। একইভাবে রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ২০১৫ সালের মধ্যে ১৫ ও ২০১৬ সালের মধ্যে ১০টিতে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু ফলাফল হচ্ছে উল্টো। লোকসানি শাখা যেখানে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা সেখানে দিন দিন আরও বাড়ছে। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমার সঙ্গে সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার পরিমাণও কমছে। এদিকে লোকসানি শাখার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয়েছে ৫৯ হাজার কোটি টাকা। যা ব্যাংক খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি টাকাই শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। ফলে অর্থ বছর শেষে মূলধন ঘাটতিতে পড়বে এসব ব্যাংক। পরবর্তীতে মূলধন ঘাটতি পূরণে আবারও বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে সরকারকে। চলতি বছরের বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য রাখা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। জানা গেছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, মূলধন ঘাটতি ও লোকসানি শাখা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ব্যাংকগুলোকে নতুন শাখা না খোলার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু ওই পরামর্শের পরও সোনালী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গত এক বছরে ৬০টির মতো নতুন শাখা খুলেছে। ফলে বছর শেষে লোকসানি শাখা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর