বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিপাকে সিলেট আওয়ামী লীগ, বিএনপি তাকিয়ে জামায়াতের দিকে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বিপাকে সিলেট আওয়ামী লীগ, বিএনপি তাকিয়ে জামায়াতের দিকে

বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেটের প্রায় সব উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের অবস্থান ছিল ভালো। কিন্তু ১১ উপজেলার মধ্যে মাত্র চারটিতে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। উপজেলা নির্বাচনে তাদের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল বিদ্রোহী প্রার্থী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মতো একই অবস্থা এবারের পৌরসভা নির্বাচনে। সিলেটের তিনটি পৌরসভার সব কটিতেই মেয়র পদে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো এই বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবির কারণ হয়ে দাঁড়ান কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত জেলা আওয়ামী লীগ। এদিকে, তিনটি পৌরসভায় একক প্রার্থী দিয়েও স্বস্তিতে নেই বিএনপি। ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থন জানানো বা তাদের পক্ষে মাঠে নামার কোনো আভাস দেয়নি। জামায়াতের এ নীরবতা ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপি প্রার্থীদের। জামায়াতের সমর্থন ছাড়া বিএনপি প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন দলের ভিতর-বাইরের অনেকেই। ৩০ ডিসেম্বর গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকে আওয়ামী লীগে ছিল নাটকীয়তা। দুবারের নির্বাচিত মেয়র (বর্তমান মেয়র) জাকারিয়া আহমদ পাপলুকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মিসবাহ উদ্দীনকে। কয়েক দিনের মাথায় কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন ফিরে পান জাকারিয়া আহমদ পাপলু। মনোনয়ন পেয়েও হারানোর পর সৈয়দ মিসবাহ সরে দাঁড়ালেও বিদ্রোহী হিসেবে ভোটযুদ্ধে থেকে গেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল জব্বার চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাবেল। এর আগে পাপলুর সঙ্গে বিদ্রোহী এ দুই প্রার্থী দুবার নির্বাচন করে পরাজিত হন। পুরনো বিরোধ থেকে এবারও সিরাজুল জব্বার ও রাবেল প্রার্থী হয়েছেন পাপলুর বিরুদ্ধে— এমন তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যবার পাপলু বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করে বিজয়ী হতে পারলেও এবার অবস্থা ভিন্ন। কেননা, ভোটাররা মনে করেন এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় এক দলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন আদায় অন্য দলের প্রার্থীর পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই দলীয় ভোটব্যাংক তিন প্রার্থী ভাগাভাগি করলে শেষ পর্যন্ত গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের চেয়ার ধরে রাখা আওয়ামী লীগের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাপগঞ্জে বিজয়ী হন জামায়াতের প্রার্থী। ওই নির্বাচনে বিএনপির কোনো সহযোগিতা পায়নি জামায়াত। উল্টো বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় জামায়াতের সঙ্গে তৈরি হয় দূরত্ব। তাই এবার গোলাপগঞ্জে জামায়াত প্রার্থী না দিলেও বিএনপির একক প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর পক্ষে মাঠে এখনো নামেননি সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। ভোটারদের ধারণা, গোলাম কিবরিয়াকে বিজয়ী হতে হলে নিজের পক্ষে টানতে হবে জামায়াতের ভোট। জকিগঞ্জ পৌরসভায় এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খলিল উদ্দিন। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক আহমদ। দল মনোনীত প্রার্থী হিসেবে একাংশের নেতা-কর্মী মাঠে নেমেছেন খলিল উদ্দিনের পক্ষে। অন্য পক্ষ ফারুক আহমদকে কারানির্যাতিত ও ত্যাগী নেতা দাবি তার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে।

দলীয় বিভক্তির নিরসন না হলে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে কঠিন মাশুল দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। গত পৌর নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি বদরুল হক বাদলকে এবারও মনোনয়ন দিয়েছে তার দল। এখন পর্যন্ত নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকা জামায়াতের সহযোগিতা না পেলে গত নির্বাচনের হালই হতে পারে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া বাদলের। কানাইঘাটে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান মেয়র লুত্ফুর রহমান। তার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আল মিজান। এ পৌরসভায় বিএনপির একক প্রার্থী রহিম উদ্দিন ভরসা। সিলেটের তিন পৌরসভার মধ্যে কানাইঘাটে স্বতন্ত্রের ব্যানারে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। জামায়াতের ব্যানারে অতীতে নির্বাচন করা ওলিউল্লাহ এবার নিজেকে নির্দলীয় প্রার্থী পরিচয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে জামায়াতও প্রকাশ্যে তার পক্ষে মাঠে না নেমে কৌশলে কাজ করছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপির কাছে জামায়াত এ পৌরসভায় নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন চাইতে পারে। এর বিনিময়ে তারা গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জে সমর্থন দিতে পারে বিএনপির প্রার্থীকে। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে এমন চুক্তি হলে কানাইঘাটে বেকায়দায় পড়তে হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। জামায়াতের সমর্থনের ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহমদ জানান, ‘পৌরসভা নির্বাচনে এখনো কোথাও জামায়াত বিএনপি প্রার্থীদের সমর্থন দেয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াত বিএনপির পক্ষেই থাকবে বলে আশা করছি।’ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে ভোটাররা নৌক প্রতীকেই তাদের সমর্থন দেবেন। এতে বিদ্রোহীরা কোনো ফ্যাক্টর হবেন না।

সর্বশেষ খবর