বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অবৈধ অস্ত্র নিয়ে শঙ্কা চট্টগ্রামের প্রার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভার নির্বাচন সামনে রেখে জেলা ও পৌর এলাকায় অবৈধ অস্ত্র, বহিরাগত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের আনাগোনার আশঙ্কা করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে তাদের মধ্যে। এই পৌর নির্বাচনে এখনো অনিয়ম, অবৈধ অস্ত্র ও বহিরাগতদের আনাগোনা চোখে পড়েনি দাবি করে এ ব্যাপারে তাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও জেলা পুলিশ প্রশাসন। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও চট্টগ্রামে কয়েকটি ছোট অভিযান ছাড়া কোনো তত্পরতা দেখা যায়নি এখনো। জেলা পুলিশ শুধু বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেফতার নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রধারীদের অস্ত্র জমা না নিলে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে নির্বাচনে এসবের অপব্যবহার হতে পারে। একই সঙ্গে জেলার বেশ কয়েকটি চিহ্নিত পৌরসভায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। তারা বলেন, পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হচ্ছেন। র‌্যাব-পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধার করলেও এর উৎস উদঘাটন না হওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। আবু তৈয়ব, জোবায়েরসহ একাধিক ভোটার জানান, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়াসহ কয়েকটি পৌরসভায় নির্বাচনে এলাকার প্রার্থীদের পক্ষে কর্মীদের চেয়ে বহিরাগতদের ব্যাপারে বেশি আতঙ্কে আছেন তারা। সাতকানিয়া পৌরসভার বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাজী রফিকুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র ও বহিরাগতদের আনাগোনার তথ্য পাচ্ছি স্থানীয়দের মধ্যে। নির্বাচনে জোর করে ভোট ছিনিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা চলছে। এতে প্রশাসনের সহযোগিতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’ সাতকানিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘নির্বাচনে অস্ত্রবাজি ঠেকানো না গেলে স্বতঃস্ফূর্ত ভোট উৎসব থেকে বঞ্চিত হব আমরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার প্রতিহত করছে। আশা করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব বিষয়ে তত্পর থাকবে।’ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে আমরা তত্পর আছি। নির্বাচন উপলক্ষে আমরা বিশেষ অভিযানও চালাচ্ছি।’ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রশাসন প্রতিনিয়ত প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন বলেন, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পৌর এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। জানা যায়, শনিবার সাতকানিয়ায় সরওয়ার উদ্দিন নামের জামায়াতের ক্যাডারকে গ্রেফতারের সময় রিভলবার ও গুলি পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ব্যবহারের জন্যই এ অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন ওই জামায়াত ক্যাডার। এর আগে ৩ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, দুটি রিভলবার, একটি একনলা বন্দুক, ১৫ রাউন্ড গুলিসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব-৭। এ দুটি অভিযান ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান নেই। সূত্রে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী সারা দেশে ৪০০ অস্ত্র চোরাকারবারির মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে ৩৪ জন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখায় তালিকাভুক্ত অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছে ৩০০। তারা দেশি-বিদেশি অস্ত্রের ব্যবসা করে এবং সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে। তালিকাভুক্তদের অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা ও নগরে পুলিশের তালিকায় রয়েছে এক হাজার ৯৭৫ জন সন্ত্রাসী। এ তালিকার বাইরেও রয়েছে অসংখ্য সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। একটি সিন্ডিকেট চট্টগ্রামে এসব অস্ত্রের বেচাকেনা করছে। সিন্ডিকেটের অস্ত্র ব্যবসায়ীরা কক্সবাজারের টেকনাফ, মহেশখালী, রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ ২০টি পয়েন্ট দিয়ে চড়া দামে অস্ত্র কেনাবেচা করে। পৌর নির্বাচন সামনে রেখে তারা তত্পর হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর