বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেউ কেউ খুশি, বাকিরা যাচ্ছেন আন্দোলনে

পে-স্কেল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মানিক মুনতাসির

অষ্টম জাতীয় নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটা একটা সময়োপযোগী বেতন কাঠামো; যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর এক ধরনের স্বস্তি ফেলেছে। অন্যদিকে প্রকৃচি বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতারা এ বেতন কাঠামোকে

অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের বেতন কাঠামোর উল্লেখযোগ্য কতগুলো ভালো দিক রয়েছে। এর মধ্যে সবার বেতন প্রায় শতভাগ বেড়েছে। অবসর সুবিধা বাড়ানো, পিআরএলের মেয়াদ ১২ মাস     থেকে বাড়িয়ে ১৮ মাস করা এবং সরকারি চাকুরেদের বাড়িভাড়া কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিলের বিষয়গুলো তাদের সামান্য হলেও আর্থিক সাশ্রয় এনে দেবে। এ ছাড়া এই প্রথমবারের মতো উৎসবভাতা চালু করাটাও এক ধরনের নতুন সংযোজন। সরকারি চাকরিজীবীর সন্তানদের শিক্ষা ও চিকিৎসা ভাতা চালু করাটাকেও ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রায় ছয় বছর পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো দেওয়াটাকে সময়োপযোগী বলে মনে করেন তারা। এদিকে প্রকৃচি বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতারা এ বেতন কাঠামোকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আখ্যা দিয়েছেন। এ জন্য আগামী ১৯ ডিসেম্বর তারা সমাবেশ ডেকেছেন। সে সমাবেশ থেকে তাদের দাবি আদায়ের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন প্রকৃচি কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির সচিব ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। তিনি বলেন, নতুন এ বেতন কাঠামোয় অসংখ্য অসঙ্গতি রয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এখন থেকে সব কর্মচারী প্রতি মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে চিকিৎসাভাতা পাবেন। আজীবন পারিবারিক পেনশনভোগীরাও এ ভাতা পাবেন ১ হাজার ৫০০ টাকা করে। তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী অবসরভোগীরা চিকিৎসাভাতা পাবেন ২ হাজার ৫০০ টাকা করে। এদিকে সরকারি বাসায় যারা থাকেন, বর্তমানে মূল বেতনের ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ তাদের কাছ থেকে বাড়িভাড়া কেটে নেওয়া হয়। এ পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরিজীবী হলে যার নামে বাসা বরাদ্দ রয়েছে, তার বেতন থেকে বাড়িভাড়া কেটে নেওয়া হবে। অন্যজন বেতনের সঙ্গে বাড়িভাড়া পাবেন। এগুলো সবই সরকারি চাকুরেদের জন্য ইতিবাচক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোসহ আরও কয়েকটি বিষয় সুরাহা না করাকে দুঃখজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এটা বিশ্লেষণ করার কিছু নেই। অনেক দিন একটা বেতন কাঠামো হয়েছে। এটার দরকার ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা একদিকে সরকারি অফিস-আদালতে কাজের গতি বাড়াবে, অন্যদিকে দুর্নীতি কমিয়ে আনতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অন্য কৌশলগুলোকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। না হলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ভোগান্তি বেড়ে যাবে। কেননা নতুন বেতন কাঠামো হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। বিশেষ করে অখাদ্য পণ্য বা সেবার দাম বেড়ে যাবে। যেমন বাড়িভাড়া, বাসভাড়া, কাপড়-চোপড়সহ গৃহস্থালির অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যেতে পারে। এখন বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী, শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ সমাজের যারা নিম্নশ্রেণির মানুষ তাদের আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় তাদের ভোগান্তি বেড়ে যাবে। এদিকে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে তদস্থলে নতুন নিয়ম চালু করাটাকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক দিন পর একটি নতুন বেতন কাঠামো দেওয়া হয়েছে এটা ইতিবাচক। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এর প্রয়োজন ছিল। তবে যে হারে বাড়ানো হয়েছে তা একটু কম বাড়ালেও হতো। কেননা বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের তো আর সেভাবে বাড়ানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। তবে যেহেতু অনেক আগে থেকেই ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতা পেয়ে আসছিলেন সরকারি চাকুরেরা তাই মূল্যস্ফীতিতে এর খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো না দেওয়াটাকে দুঃখজনক বলে তিনি মনে করেন। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা সময়োপযোগী বেতন কাঠামো। সরকারি অফিস-আদালতে দুর্নীতি কমাতে সহায়ক হবে। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। দুর্নীতি কমানোর অন্য উপাদান যেমন— নৈতিকতা, সুশাসনের মতো বিষয়গুলোকেই কাজে লাগাতে হবে। নতুন বেতন কাঠামো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মউদ্দীপনাও বাড়াবে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর