শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সূর্যাস্তের পর সীমান্তে চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব ভারতের

যৌথ সীমান্ত সম্মেলনের কার্যবিবরণী

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মাদক পাচার ও চোরাচালান ঠেকাতে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে লোক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। পাশের দেশটির ওই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া নকল মুদ্রা (ভারতীয় রুপি) পাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটি এ ব্যাপারে যৌথভাবে কাজ করারও প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত জেলা প্রশাসক-জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে যৌথ সীমান্ত সম্মেলনে এসব প্রস্তাব করা হয়। সম্মেলনের কার্যবিবরণী সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সীমান্তে রাতের বেলায় লোক চলাচল নিষিদ্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে মৌলভীবাজার জেলার ডেপুটি কমিশনার কামরুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসন থেকে বিজিবিকে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২৮ থেকে ৩০ নভেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফে এ যৌথ সীমান্ত সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন মৌলভীবাজারের ডেপুটি কমিশনার কামরুল হাসান ও ভারতের আসাম প্রদেশের কাছার জেলার ডেপুটি কমিশনার এস বিশ্বনাথন। বৈঠকে সীমান্ত অপরাধ বিশেষ করে চোরাচালান, মাদক এবং মানব পাচারসংক্রান্ত আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে ৪৬ বিজিবি বিএন-এর কমান্ডিং অফিসার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ভারত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেনসিডিল, ক্যানাবিস জাতীয় মাদক পাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জবাবে ভারতের ৫৩ বিএসএফ বিএন-এর কমান্ড্যান্ট বলেন, মাদক পাচার প্রতিরোধ করার জন্য সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের চলাচল সীমিত করতে হবে। বিশেষ করে দুই দেশের সীমান্তরেখা দিয়ে যেখানে নদী রয়েছে সেখানে রাতের বেলায় (সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত) লোক চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। পরে উভয় দেশ রাতের বেলায় সীমান্ত নদীতে লোক চলাচল নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে। মৌলভীবাজারে ডেপুটি কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, রাতের বেলায় যে কোনো ধরনের মুভমেন্ট নিষিদ্ধ করতে ১৪৪ ধারা জারির প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। তাদের সীমান্তে ১৪৪ ধারা জারি থাকে বলেও আমাদের অবহিত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে এ ধরনের প্রশাসনিক উদ্যোগে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে বলে আমরা ১৪৪ ধারা জারির প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। তবে রাতের বেলায় যাতে লোক চলাচল বন্ধ থাকে সে ব্যাপারে বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই ইস্যুতে আলোচনায় ভারতের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রচুর নকল মুদ্রা (রুপি) ভারতে ঢুকছে বলে অভিযোগ করে। এর জবাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল জানায়, এ ধরনের কাজের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা পাচারকারী দল জড়িত। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ আরও জানায়, নকল মুদ্রা পাচারের যেসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এসেছে তার প্রায় সব কটিতেই বিদেশি নাগরিকদের সংশ্লেষ পাওয়া গেছে। জড়িত বিদেশি নাগরিকদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। এ ছাড়া মুদ্রা পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে বলেও ভারতকে আশ্বস্ত করা হয়। প্রসঙ্গত, তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সীমান্তে হত্যা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মাদক পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধ, সীমান্তহাট, মানব ও নকল মুদ্রা পাচার, দুই দেশের রেল যোগাযোগ, সীমান্ত নদীতীর ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সীমান্তবর্তী জেলার ব্যবসায়ীরা ওই বৈঠকে অংশ নেন। ৩ ডিসেম্বর বৈঠকের কার্যবিবরণী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর