মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুর্গে অসহায় জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই রংপুরকে বলা হয় জাতীয় পার্টির দুর্গ। পার্টি চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি হওয়ায় বৃহত্তর রংপুরবাসী লাঙ্গল প্রতীকের বিষয়ে ছিল একাট্টা। কিন্তু সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এতে ভাটা পড়েছে। দুর্বল হয়েছে দলের সাংগঠনিক অবস্থাও। এখন নিজেদের দুর্গেই অসহায় অবস্থায় পড়েছে জাতীয় পার্টি। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ১৯টি পৌরসভার বেশির ভাগেরই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। অধিকাংশেই লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষে। জাপার নেতা-কর্মীরা জানান, ভাঙা-গড়া ও বিরোধের মধ্য দিয়ে চলছে রংপুরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি। হাতে গোনা কয়েকজন নেতার নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলে স্থবির হয় জাপার কার্যক্রম। এক সময় এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমনকি ওয়ার্ড কমিশনার পর্যন্ত জাতীয় পার্টির ব্যানারে নির্বাচিত হতো। পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ গর্ব করে বলতেন, আমার দল থেকে কলাগাছ দাঁড় করালেও সে জয়ী হবে। আজ সে অবস্থা নেই। বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধিদের তথ্যানুসারে, রংপুর জেলার ৬ আসনের মধ্যে ৪টি আসনের এমপি, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড কমিশনারসহ সব এর আগেই গেছে আওয়ামী লীগের দখলে। এখন জেলার উলিপুর ও নাগেশ্বরী পৌরসভায় নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও কুড়িগ্রাম পৌরসভায় লাঙ্গল প্রতীকে কোনো প্রার্থী নেই। তাই কুড়িগ্রামে লড়াই হবে দ্বিমুখী। উলিপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শক্ত অবস্থান গেড়েছে। তাই ভোটাররা মনে করছেন, সেখানে লড়াই হবে বিএনপি ও জাপার মধ্যে। কুড়িগ্রাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নৌকা প্রতীকে আ. জলিল, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নুর ইসলাম নুরু প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। নাগেশ্বরী পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. হোসেন ফাকু, বিএনপির আদম আলী, জাতীয় পার্টির আ. রহমান মিয়া, স্বতন্ত্র আবদুল আজিজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উলিপুরে আওয়ামী লীগের আ. হামিদ সরকার, বিএনপির তারিক আবু আলা চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির সফিকুল ইসলাম দারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দিনাজপুরের ৫ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ও আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল ইসলামের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা। বীরগঞ্জের ৫ প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়ায়ের সম্ভাবনা। শুধু পিছিয়ে জাতীয় পার্টির মূল ও বিদ্রোহী দুই প্রার্থী। এখানে প্রার্থীদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের পৌর সভাপতি মোশাররফ হোসেন বাবুল, জাতীয় পার্টির দেলোয়ার হোসেন আবু, বিএনপির বীরগঞ্জ পৌর সভাপতি আলহাজ আমিরুল বাহার। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির উপজেলা সহসভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র মো. রশিদুল আলম। বিরামপুর পৌরসভায় মেয়র পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সাবেক মেয়র বিএনপির আজাদুল ইসলাম আজাদ, আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আক্কাস আলী ও জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ডক্টর মুহাদ্দিস মো. এনামুল হকের মধ্যে ত্রিমুখী লড়ায়ের সম্ভাবনা রয়েছে। হাকিমপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনএএম জামিল হোসেন চলন্ত, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী এবং জাতীয় পার্টির সুরুজ আলী শেখ। নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ফুলবাড়ী পৌরসভায় বিএনপির শাহাদৎ আলী সাহাজুল, আওয়ামী লীগের শাহজাহান আলী সরকার পুতু ও স্বতন্ত্র খনি আন্দোলন নেতা বর্তমান মেয়র মুরতুজা সরকার মানিকের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা। নীলফামারীর জলঢাকায় আওয়ামী লীগের আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর ও বিএনপির ফাহমিদ ফয়সল চৌধুরী কমেটের মধ্যেই দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা। নীলফামারীর সৈয়দপুরে আওয়ামী লীগের সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন, বিএনপির আমজাদ হোসেন সরকার, জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদীন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই মেয়র প্রার্থীরই ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে এখানে। লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান  মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু, বিএনপির আবদুল হালিম, এইচ এম এরশাদের জাপার কোনো প্রার্থী খুঁজে পায়নি,  জেপির (মঞ্জু) প্রার্থী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়েদুল হাসান সেনা। মেয়র পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করলেও লড়াই হবে রিন্টু-হালিমের মধ্যে। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের কশিরুল আলম কশির, বিএনপি রাজিউর রহমান রাজু, জাপার গোলাম হোসেন, স্বতন্ত্র আলমগীর কবীর জুয়েল। বদরগঞ্জে  মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকের সহকারী অধ্যাপক আজিজুল হক ও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের উত্তম সাহা। গাংনীতে আওয়ামী লীগের আহম্মদ আলী, বিএনপির ইনসারুল হক ইন্সু, জাতীয় পার্টির এস এম মর্তুজা, ইসলামী আন্দোলনের হুজ্জাতুল ইসলাম, অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম। গাইবান্ধা পৌরসভায় বর্তমান মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শামছুল আলম, আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ মাসুদ, বিএনপির শহীদুজ্জামান শহীদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে  পৌরবাসী মনে করছেন। গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান, বিএনপির মো. ফারুক আহমেদের মধ্যে লড়াই হবে সমানে সমান। সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন, বিএনপির আজাদুল করিম প্রামাণিক নিপু, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এটিএম মাসুদুল ইসলাম চঞ্চলের লড়াই হবে বলে পৌরবাসীর ধারণা। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মশিউর রহমান সরকার বড় অঙ্কের ভোট টানলেও তার সম্ভাবনা কম। পঞ্চগড়েও পৌরসভায় লড়াই জমবে নৌকা আর ধানের শীষে।

সর্বশেষ খবর