শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভোটকেন্দ্র ৩৪০৩, ঝুঁকিপূর্ণ ১১৮৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটকেন্দ্র ৩৪০৩, ঝুঁকিপূর্ণ ১১৮৪

পাঁচ কারণে পৌর ভোটের দিন গোলযোগের শঙ্কার কথা জানিয়ে তা নিরসনে দুই দফা সুপারিশসহ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে দেখানো হয়েছে, মোট ভোট কেন্দ্রের এক তৃতীয়াংশই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে খুলনা বিভাগ।

নির্বাচন কমিশনের একজন উপসচিব জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের এ প্রতিবেদন তারা গত বুধবার হাতে পেয়েছেন। এখন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা পাঠানো হবে, যাতে ভোটে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ভোটে থাকা ২৩৩ পৌরসভার মোট ৩ হাজার ৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টিই ঝুঁকিপূর্ণ, যা মোট ভোট কেন্দ্রের ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেন্দ্র খুলনায়। এ বিভাগের ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া রংপুর বিভাগে ৩০৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি, বরিশাল বিভাগে ১৬৭ কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮০ কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি, ঢাকা বিভাগে ৯৯১ কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৮০১ কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৬টি এবং সিলেট বিভাগে ১৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ মঙ্গলবার বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে এ ব্যবস্থা নেবে।

গোলযোগের শঙ্কা : ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে গোলযোগের পাঁচটি সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে— বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রার্থীদের জয়ী করতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ‘ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখার’ চেষ্টা করতে পারেন, ‘নাশকতা বা গোলযোগ সৃষ্টির’ চেষ্টা চালাতে পারেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও একচেটিয়া ভোট পাওয়ার চেষ্টায় ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীরা’ কিছু কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারেন, নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত কিংবা রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে’ বিএনপি-জামায়াত ‘গোলযোগ’ সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া ভোটের পর পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা ‘বিক্ষুব্ধ হয়ে বা পূর্বশত্রুতার জেরে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে’ এলাকায় গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, একাধিক প্রার্থীর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— সারা দেশে বিভিন্ন কেন্দ্রে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী (বিদ্রোহী) থাকায় দলীয় অন্তঃকোন্দলের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতা হতে পারে।

বাড়তি নিরাপত্তা সুপারিশ : পৌর নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে— ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করার পাশাপাশি ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা অব্যাহত রাখা উচিত। ‘সংখ্যালঘু অধ্যুষিত’ এলাকাগুলোতে ভোট গ্রহণের আগ থেকে নির্বাচনের পর পর্যন্ত সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান জানান, ইসির চাহিদার চেয়ে বেশি নিরাপত্তা সদস্য ভোটে থাকবে। সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সর্বশেষ খবর