শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাণিজ্যিক ব্যাংক পাচ্ছে নৌ ও বিমানবাহিনী

প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য যৌথভাবে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিয়েছেন। সম্প্রতি এই সম্মতির কথা জানিয়ে ব্যাংকিং বিভাগকে চিঠি দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী কর্তৃক যৌথভাবে একটি ব্যাংক স্থাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানে পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করুন।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম আবুল কালাম আজাদ ১৭ ডিসেম্বর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এই চিঠিটি পাঠিয়েছেন। চিঠির সঙ্গে নৌবাহিনী প্রধান এবং নৌ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবীব স্বাক্ষরিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স চেয়ে করা আবেদনপত্রটিও সংযুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ব্যাংক স্থাপনের সম্মতি চেয়ে করা আবেদনে নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবীব বলেছেন, ‘মেরিটাইম ব্যাংক লিমিটেড’ নামে এই ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হলে দুই বাহিনী (নৌ ও বিমান) এবং এর সদস্যদের আর্থিক লেনদেন ও সেবা সহজ হবে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বাণিজ্যিক উদ্যোগ নৌ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নামে ব্যাংকের লাইসেন্স চাওয়া হলেও বিমান বাহিনী যৌথভাবে এই ব্যাংক পরিচালনায় সম্মতি দিয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। আবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হলে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে সামুদ্রিক ও এভিয়েশন খাতে বড় বিনিয়োগে অর্থায়ন করা যাবে। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি, জাহাজ ও বিমান নির্মাণ শিল্প, বিভিন্ন বন্দর, সামুদ্রিক ব্যবসা, মত্স্য প্রকল্প, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, গভীর সমুদ্র মত্স্য প্রকল্প এবং অফশোর ইনভেস্টমেন্ট করা হবে। এ ছাড়া মেরিটাইম ব্যাংক এসএমই, কৃষি, শিল্প, হালকা প্রকৌশল শিল্প, বৈদেশিক রেমিট্যান্স এবং খুচরা ও কনজ্যুমার ব্যাংকিং পরিচালনাসহ ‘ব্লু ইকোনমি ও সি কমার্স সম্প্রসারণে’ কাজ করতে পারবে বলে আবেদনে যুক্তি দেখানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো আবেদনপত্রে নৌবাহিনী প্রধান বলেছেন, তার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ২২ হাজার এবং এ সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেতন-ভাতার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমও বাড়ছে।  এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি তহবিলে নৌবাহিনীর সম্পৃক্ততা, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে জাহাজের সংখ্যা, বিদেশের সঙ্গে সম্প্রীতি বাড়াতে যাতায়াতসহ নৌবাহিনীর মাধ্যমে নানাবিধ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়েছে উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ডের আর্থিক লেনদেন বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি নৌবাহিনীর একটি নিজস্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকে তাহলে বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হবে, পাশাপাশি অনেক অর্থেরও সাশ্রয় হবে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সেবা দিতে বর্তমানে সেনাকল্যাণ ফাউন্ডেশনের অধীনে ট্রাস্ট ব্যাংক নামে একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ‘আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক’ নামে রাষ্ট্র মালিকানাধীন আরেকটি বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশও (বিজিবি) ‘সীমান্ত ব্যাংক’ নামে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপনের আবেদন করেছে সরকারের কাছে।  ব্যাংকিং বিভাগ জানায়, বর্তমানে মোট ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে সরকার নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়, যার মধ্যে ছয়টি দেশীয় উদ্যোক্তা এবং তিনটি প্রবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছে।    

সর্বশেষ খবর