শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফ্যাক্টর সংখ্যালঘু ভোটার

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

ফ্যাক্টর সংখ্যালঘু ভোটার

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভায় ততই নতুন মেরুকরণের সৃষ্টি হচ্ছে। ভোটের হিসাব মেলাতে এখন ব্যস্ত আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থী। কটিয়াদী পৌর এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি। আর এই হিন্দু ভোট যেদিকে যায়, সেই প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা থাকে বেশি। এ পৌরসভায় প্রধান দুই দলের নেই কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী। দুই দলের মাঝখানে শুধু একজন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। যার প্রচারণা নেই বললেই চলে। শুধু নিজেকে পরিচিত করতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির নেতা- কর্মীরা জানান। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন আহমেদ আলমের সহোদর নূরুল হক আওয়ামী লীগের নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। কটিয়াদী পৌরসভায় মোট ভোটার ২৫ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৬৩৫ ও মহিলা ১৩ হাজার ৩২২ জন। মেয়র পদে তিনজন  এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০ জন। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ৯ জন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শওকত ওসমান শুক্কুর আলী, বিএনপির প্রার্থী মো. তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন আহমেদ আলম। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রচারণা চোখে পড়ার মতো নয়। সরেজমিন দেখা গেছে, এ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রার্থীদের নজর এখন হিন্দু ভোটারদের দিকে। কটিয়াদী পৌর শহর পূর্ব ও পশ্চিম অংশে বিভক্ত। দুই পাড়েই হিন্দুদের বসতি বেশি। গতবারের নির্বাচনে এই ভোটারের ৮০ ভাগই পেয়েছিল বিএনপির প্রার্থী দিলীপ খান। তবে এবার কোথায় যাবে হিন্দু ভোট সেদিকেই নজর সবার। অপর দিকে জামায়াতের দলীয় কোনো প্রার্থী না থাকলেও গোপনে ২০-দলীয় জোটের শরিক বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দিলীপ খানের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

 

এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল বিশেষ করে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের পছন্দ ছিল কটিয়াদী কলেজের সাবেক ভিপি গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে। কিন্তু বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনের পছন্দের প্রার্থী শুক্কুর আলী মনোনয়ন পান। আর এই মনোনয়ন নিয়ে প্রথম দিকে মনোমালিন্য থাকলেও এখন সবাই একাট্টা হয়েই নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। মেয়র প্রার্থী শুক্কুর আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানকার মানুষ নৌকা প্রিয়। নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপিতে  একক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দিলীপ খান। আর এখানে বিএনপিতে নেই কোনো গ্রুপিং।

জানা গেছে, হিন্দুদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বড় পদের নেতা কটিয়াদী ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি দুলাল বর্মণ যিনি গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী দিলীপ খানের পক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু এবার নৌকার পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে সাধারণ হিন্দু ভোটারদের মাঝে আলোচনা রয়েছে, মাঠে কাজ করলেও নির্বাচনের দিন কোন দিকে ভোট দেয় বা আমাদের কোন নির্দেশনা দেয় তার কোনো ঠিক নেই। অপরদিকে এক সময়ের আওয়ামী লীগের নেতা শেখর সাহা এবারও বিএনপি প্রার্থী দিলীপ খানের পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ লোক ব্যক্তি দিলীপকে পছন্দ করি।

পৌরসভা ঘুরে দেখা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্সবের নগরীতে পরিণত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কটিয়াদী। পৌর এলাকার চারদিকে শুধু নৌকা, ধানের শীষের প্রচারণা। মাইক দিয়ে দিন-রাত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে যেমনই প্রচারণা চলছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও প্রচারণা চলছে। সর্বত্র এখন শুধু পোস্টার আর পোস্টার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে দেখা যায়। এ পৌরসভায় জামায়াত কোনো নির্বাচনী কার্যক্রমে না থাকলেও তাদের ভোটের দিকে চেয়ে আছেন সব প্রার্থীই। অপরদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও দলীয় নেতাদের বেশিরভাগই নৌকার পক্ষে কাজ করতে দেখা যায়। তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জামায়াতের ভোট যাবে বলে স্থানীয়রা জানান।

গতকাল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. শওকত ওসমান শুক্কুর আলী নেতা-কর্মীদের নিয়ে বাগরাইদ, পশ্চিমপাড়া, ভোকপাড়া, বীরনোয়াকান্দিসহ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেন। দুপুরের দিকে ভোকপাড়া এলাকায় দেখা হয় নৌকার প্রার্থী শুক্কুর আলীর সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, এ এলাকার মানুষ নৌকাকে বেশি ভালোবাসে। তাই তারা পৌর নির্বাচনে নৌকা পেয়ে অনেক খুশি। তিনি বলেন, অন্যান্য সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকায় অনেক নেতা দিলীপের পক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু এবার ভিন্ন। কারণ দলীয় প্রতীক নৌকা রয়েছে। আর এ জন্য সবাই একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন।

বিএনপির প্রার্থী মো. তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ সকাল থেকে পৌর এলাকার নামা বোয়ালিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেন। গতকাল বিকালে দিলীপ খানের সঙ্গে তার নিজ বাড়িতে দেখা হয়। এ সময় তিনি বলেন, ২২ ডিসেম্বর কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করার সময় আওয়ামী লীগের লোকজন আমার সামনেই কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় কর্মী পাপ্পু, খোকন, দুলাল, গোপালকে পিটিয়ে আহত করা হয়। অথচ, কর্মীদের বিরুদ্ধে আবার থানা পুলিশ মামলা দিয়ে পাপ্পুকে গ্রেফতারও করেছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে আমাদের কর্মীদের বেছে বেছে মামলার হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। তবে এসব বিষয়ে কটিয়াদী থানার ওসি আব্দুছ ছালাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাপ্পুর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এটা নিয়ে বিএনপির প্রার্থী ভিন্ন কথা বলছেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন আহমেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

কটিয়াদী বাজারের হিন্দু ব্যবসায়ী মৃণাল বলেন, আমরা যাকে পেলে শান্তিতে ব্যবসা করতে পারব তাকেই ভোট  দেব। একই কথা বলেন, পাট ব্যবসায়ী অনন্দ চন্দ্র। তিনি বলেন, বহুদিন ধরে ব্যবসা করিতেছি। পৌর এলাকা হওয়ার পরও আমাদের আলাদা অতিরিক্ত কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। আমরা খুব আরামেই ব্যবসা করে যাচ্ছি। রিকশাচালক আহসান বলেন, এইহানে তো সবাই নৌকা নৌকা করেন। নৌকা-ই তো পাস করবে। এদিকে কটিয়াদী উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম খালেদ বলেন, আমাদের যেহেতু কোনো প্রার্থী  নেই, সেজন্য আমরা কোথায় ভোট দিব এখনো ঠিক করিনি। তবে হয়তো ২০ দলের শরিক বিএনপির পক্ষেই দিতে হবে।

কটিয়াদী পৌরসভার নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, সবগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।

সর্বশেষ খবর