শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাংবাদিক সজীবের দাফন হত্যার অভিযোগ পরিবারের, আটক ১

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক আওরঙ্গজেব সজীবের মরদেহ দুদফা জানাজা শেষে গতকাল মাগরিবের নামাজের পর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে সকালে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। দুপুরে মুন্সীগঞ্জ থানা পুলিশ সজীবের লাশ তার ছোটভাই রাজন আহমেদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে পুরান ঢাকার বকশীবাজার কমলদাহ্ উর্দু রোডের ৯/১ নম্বর বাসায় সজীবের মরদেহ আনা হয়। এ সময় আশপাশের লোকজন তাকে দেখার জন্য ভিড় করেন। সহকর্মীরাও শেষ দেখার জন্য ছুটে যান ওই বাড়িতে। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীরা। এ সময় হূদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাদ আছর চকবাজার শাহী জামে মসজিদে সজীবের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ আনা হয় তার কর্মস্থল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। দীর্ঘদিনের পরিচিত লোকটিকে হারিয়ে মেডিকেলে কর্তব্যরত সহকর্মীসহ ডাক্তার, নার্স ও স্টাফরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেডিকেলে মাগরিবের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, সজীবকে হত্যা করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে মর্গের ডোমদের বরাত দিয়ে নিহতের ছোটভাই রাজন আহমেদ বলেন, ডোমরা বলছে, হাত ফুলে গেছে। সম্ভাবত হাতে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মুখেও খোঁচা খোঁচা অনেক দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ধারালো কিছু দিয়ে মুখে কোপ দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সজীবের ছেলে নূর মোহাম্মদ সোহান বলেন, আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবা কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত করলেই এ হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে।

স্বজনদের দাবি, নিখোঁজের দিন অর্থাত্ গত রবিবার সকালে ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে ঢাকা মেডিকেলের ‘অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্যের সিন্ডিকেট’ নিয়ে একটি নিউজের লাইভে ছিলেন সজীব। এ নিয়ে ওই সিন্ডিকেটের অনেকের সঙ্গে সজীবের বাকবিতণ্ডা হয়। এরপরই সজীব নিখোঁজ হন। ঘটনাটি রহস্যজনক। তারা বলছেন, সজীবকে ঢাকা মেডিকেল থেকে অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করে নদীতে ঝাপ দেওয়ার নাটক সাজানো হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা মেডিকেলের ওয়ার্ড মাস্টার বাবুকে সন্দেহ করছেন সজীবের স্বজনরা। র্যাবের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৪ ডিসেম্বর মুনিয়াকে বিয়ে করেন সাংবাদিক সজীব। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের সঙ্গে মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় থাকেন মুনিয়া। সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুনিয়াকে আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সজীব মুনিয়াকে বিয়ে করেছিলেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সজীবের এই দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানতেন না তার পরিবার এবং সহকর্মীরা। সজীবের এক সহকর্মী জানান, এ ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত এবং ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়ার পরই হত্যা মামলা করা হবে। তবে লাশ উদ্ধারের পর থেকেই সজীবের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম নিশি দাবি করে আসছিলেন, তার স্বামী আত্মহত্যা করতে পারেন না। লঞ্চ থেকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সজীবের ব্যবহূত দুটি মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোখলেসুর রহমান বলেছেন, সজীবের মোবাইল ফোনে কয়েকটি কল রয়েছে রহস্যজনক।

বিশেষ করে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত এক তরুণী কল করে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার চাঁদপুরগামী এমভি তাকওয়া লঞ্চ থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন সাংবাদিক আওরঙ্গজেব সজীব। তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর বুধবার বিকালে তার লাশ মুন্সীগঞ্জ শহর সংলগ্ন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে নয়াগাঁও এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। সজীবের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার খাসকান্দি গ্রামে।

সাংবাদিক সজীব দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বেশ কয়েকটি টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিনিধি ছিলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম নিশি। এর আগে গত সোমবার শাহবাগ থানায়ও একটি জিডি করা হয়।

সর্বশেষ খবর