শিরোনাম
শনিবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

পৌর নির্বাচনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দলীয়ভাবে প্রথম বারের মতো পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ নির্বাচনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অর্জন-বিসর্জন নিয়েই এটা করা হচ্ছে। বিভিন্ন পৌরসভায় ভোটগ্রহণ স্থগিতের কারণ, কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ মূল্যায়নও করবে ইসি। এদিকে, নির্বাচনের আগের রাতে সিল মারা, জাল ভোট, কেন্দ্র দখলসহ সব অনিয়মের বিষয়ে জানাতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশনাও দেওয়া হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইসির নিজস্ব রিটার্নিং অফিসাররা ভোট সুষ্ঠু করতে বেশি ভূমিকা নিয়েছেন। অন্যদিকে এবারের পৌর নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনরা সন্তুোষ প্রকাশ করলেও বিএনপি ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। ভোটে অংশ নেওয়া সিপিবিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসির সমালোচনাও করেছে। তবে পর্যবেক্ষক সংস্থা গ্রুপ ইডব্লিউজি মনে করছে, ভোট প্রশ্নবিদ্ধ নয়। এবার ২৯ সংস্থার প্রায় ৪ হাজার পর্যবেক্ষক ছিল মাঠে। তারাও আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন দেবে ইসিকে। তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এ কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত অন্য নির্বাচনের সমস্যা থেকে এবার কিছুটা বের হতে পেরেছে বলা যাবে। তবে এই নয় নির্বাচন অনেক সুষ্ঠু হয়েছে। বলা চলে কমিশন এবার একটু চেষ্টা করেছে। কাজী রকিবউদ্দীনের অধীনে ২০১৩ সালে চার সিটি, ২০১৪ সালে দশম সংসদ ও উপজেলা পরিষদ এবং ২০১৫ সালের ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বছর শেষের পৌর ভোটে। তবে ২০১১ সালের পৌরসভার চেয়ে অন্তত ৪ শতাংশ কম ভোটার উপস্থিতি ছিল এবার। ভোট পড়ার হারে গতবারের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও এবারে বেশি গড় ভোটার উপস্থিতি ছিল পৌর নির্বাচনে। বুধবার প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে এবং একদিনে ২৩৪ পৌরসভার ভোট করল কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ভোটের পরদিন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, স্থগিত কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট ২০ পৌরসভা ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৭ পৌরসভা বাদ দিয়ে বাকি পৌরসভাগুলোর গড়ে প্রায় ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। ২০৭ পৌরসভার মেয়র পদে ভোট পড়ার হার গড়ে ৭৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। অবশ্য এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির সময়কালে প্রথমবারের মতো প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়। ওই সময় ২৫০ পৌরসভায় ভোট করা হয়। দুই ধাপ শেষ করে ১৫ জানুয়ারি তত্কালীন সিইসি শামসুল হুদা জানিয়েছিলেন, ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে সব শেষে গড়ে প্রায় ৭৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান। এদিকে, ২০১১ সালে মেয়র পদে একমাত্র নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভায়। এবার নাটোর, বেলকুচি ও তারাব পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজন নারী নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান। মেয়র পদে পাঁচ বছর আগে আওয়ামী লীগ-বিএনপি লড়াই ছিল সমানে সমান। ২৪৭ পৌরসভায় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৯৬টি এবং বিরোধী দল বিএনপি পায় ৯৪টি। পাঁচ বছর পর এবার আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১৭৭ আর বিএনপি পেয়েছে ২২টি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের ইসির অধীনে দশম সংসদে ১৪৭ আসনে ভোট হয়। বাকি ১৫৩ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। ৫ জানুয়ারির ভোটে ৪০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০১৩ সালের জুনে চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৭০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ভোট ছিল ৬৪ শতাংশ। ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। সব মিলিয়ে এ কমিশনের অধীনে সব থেকে বেশি ভোটার উপস্থিতি  গেল পৌর নির্বাচনে। সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় উত্সাহ-উদ্দীপনাও ছিল বেশি। এদিকে, ইসি সচিব জানান, ২০৭ পৌরসভায় ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ৯২ শতাংশ হারে। পর‌্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫ পৌরসভায় ভোট পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি। ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ৭৪ পৌরসভায়। এবার  সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুরে ৯২ দশমিক ১৭ শতাংশ; আর সর্বনিম্ন পড়েছে ঢাকার সাভারে ৪৬ দশমিক ৯২ শতাংশ।

৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে— জয়পুরহাটের কালাইয়ে ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ, রাজশাহীর মোহনপুরে ৯২ দশমিক ১৭ শতাংশ, কুষ্টিয়ার মিরপুরে ৯০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বরিশালের উজিরপুরে ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ ও নাটোরের নলডাঙায় ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এবারের পৌর নির্বাচনে ভোটের হারকে স্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। উল্লেখ্য,  এবার ভোট হয়েছে ২৩৪ পৌরসভায়। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাতটিসহ মোট ১৬৮টিতে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ১৯, জাতীয় পার্টি ১ ও স্বতন্ত্র ২৬  পৌরসভায় জয় পেয়েছে। এই ২৬টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এবং জামায়াত-সমর্থক প্রার্থী আছেন।

সর্বশেষ খবর