রবিবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে অভিজাত হাসপাতালে অবিরাম বাণিজ্য

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল, বাহ্যিক চাকচিক্য চোখ ধাঁধানো। ভেতরের অবয়বও পরিপাটি। আধুনিক সাজসজ্জায় ঠাসা। এসব হাসপাতালের অধিকাংশই গড়ে উঠেছে অভিজাত হোটেলের আঙ্গিকে। কিন্তু ভেতরে অনিয়মের স্বর্গরাজ্য। স্বাস্থ্যসেবার নামে এসব অভিজাত হাসপাতালে চলছে বেপরোয়া বাণিজ্য। নানা অনিয়মে ভর করে এগুলো একদিকে রোগীদের সঙ্গে করছে প্রতারণা, অন্যদিকে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ। জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের সিএসসিআর প্রাইভেট লিমিটেড অনুমোদনের বেশি শয্যা নিয়ে চিকিত্সা দিচ্ছে। মেট্রোপলিটন হাসপাতাল আইসিইউর কোনো অনুমোদন না নিয়েই বিশেষায়িত এ সেবা চালাচ্ছে। তা ছাড়া হাসপাতালের ফার্মেসিগুলোতে মিলছে অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। র্যাবের অভিযানেও এসব অভিজাত হাসপাতালের নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে। এ জন্য গত ৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের জিইসি, গোলপাহাড় মোড় এলাকার অভিজাত হাসপাতাল মেট্রোপলিটনকে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা, সিএসসিআরকে ৪ লাখ টাকা, রয়েল হাসপাতালকে ৪ লাখ টাকা, মেডিকেল সেন্টারকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতালের এইচডিইউতে রেখে চিকিত্সার নামে রোগীদের জিম্মি করে অর্থ আদায়, অপ্রয়োজনে এইচডিইউতে রোগীদের রাখতে বাধ্য করাসহ নানাভাবে রোগীদের কাছ থেকে দৈনিক ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা হাতানো হচ্ছে। জানা গেছে, অভিজাত হাসপাতালগুলোতে রোগী এলেই ‘রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন’ বলে সিসিইউ বা এইচডিইউতে রেখে চিকিত্সার পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্যথায় ‘রোগীর ক্ষতি হতে পারে’ বলে ভয় দেখানো হয়। তখন স্বজনরা বাধ্য হয়ে তাদের কথা মেনে নিতে বাধ্য হন। তাদের কথা, এসব স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে দেখার যেন কেউ নেই। জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতর গত বছরের ৪ অক্টোবর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘যারা অনুমোদনহীন বিশেষায়িত চিকিত্সা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১০ দিনের মধ্যে অনুমোদন’ নেওয়ার জন্য বলে। কিন্তু চট্টগ্রামে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানই অনুমোদনের জন্য আবেদন করেনি বলে সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে। সূত্রে আরও জানা যায়, মহানগর ও জেলায় অনুমোদিত প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে ৩৭টি। আর অনুমোদিত প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি রয়েছে ৩৪৩টি। কিন্তু এর বাইরেও চট্টগ্রামে অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, হাসপাতালের পাশাপাশি পৃথকভাবে আইসিইউ-সিসিইউর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ও সিসিইউগুলোর অনুমোদন নেই। এ ব্যাপারে আমরা একটি বৈঠকে বসব। তা ছাড়া অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে— এ রকম হাসপাতালের একটি তালিকাও তৈরি করা হবে। এরপর জেলা প্রশাসন, ওষুধ প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ নিয়ে আমরা অভিযানসহ নানা উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদনহীন আইসিইউগুলোর অনুমোদন নেওয়ার ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে সাড়া দেয়নি। জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, অনুমোদন না নিয়ে আইসিইউ পরিচালনা করা অন্যায়। তা ছাড়া এটি যেহেতু স্পর্শকাতর একটি ইফনিট, তাই সেখানে প্রশিক্ষিত জনবল জরুরি। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর