বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্কুলে লাগামহীন বেতন বৃদ্ধি

অভিভাবকদের স্মারকলিপি বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিকারুননিসা নূন স্কুলে গত বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এ বছর নেওয়া হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। বাকি ক্লাসগুলোতেও বাড়ানো হয়েছে বেতন। একইভাবে নতুন বছরে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে বেড়েছে বেতন। এই দুই স্কুলের মতো আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এভাবে দ্বিগুণ হারে বাড়ানো হয়েছে ভর্তি ফিসহ বেতন। এ নিয়ে গতকালও ভিকারুননিসার সামনে বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবকরা। একই প্রতিবাদে সকালে তারা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালকের কাছে ও বিকালে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ভিকারুননিসার ১ নম্বর ফটকের সামনে বিপুল সংখ্যক অভিভাবক বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় ‘অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধি মানি না, মানব না’  স্লোগান দিতে থাকেন অভিভাবকরা। এক অভিভাবক বলেন, এবার লটারিতে ভর্তির সুযোগ থাকায় অনেক গরিবের সন্তানও ভর্তি হয়েছে। বর্ধিত এ ফি তাদের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। জানা গেছে, আজও অভিভাবকরা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। এর আগে কয়েক দফা বিক্ষোভ করেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের অভিভাবকরা। জানা যায়, ভর্তি নীতিমালা অমান্য করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বিগুণ বা তারও বেশি ফি আদায় করছে। অথচ ভর্তি নীতিমালা ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা, আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবহির্ভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নেওয়া যাবে। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হবে, তাই এ ভর্তি ফি ও বেতন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকরা বলছেন, স্কুলগুলোতে অস্বাভাবিক হারে ফি বাড়ানো হয়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পক্ষে এ ফি পরিশোধ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বলে জানিয়েছেন তারা। শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়া দলের এক অভিভাবক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী বলেছেন, বর্ধিত ফিতে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে টিউশন ফির মাধ্যমে এ বর্ধিত ফি সামঞ্জস্য করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।’ এর আগে বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে কয়েক দফায় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা বর্ধিত বেতন ও ভর্তি ফি বাতিলের দাবি জানিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক  রেহানা আক্তার শিল্পী বলেন, ভর্তি নীতিমালা মানছে না এ প্রতিষ্ঠান। আমার এক সন্তান দশম শ্রেণিতে পড়ছে। আরেক সন্তানকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাব। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি ফি গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ করে ৮ হাজার ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে দশম শ্রেণির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া উন্নয়ন ফি ৩ হাজার করা হয়েছে। মাফিক টিউশন ফি ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য  দেড় হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার ও দশম শ্রেণিতে এ ফি ১ হাজার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নোটিস না দিয়েই স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি ফি ও বেতন বাড়ায় বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেন বলেন, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার রাজধানীতে ক্লাস ওয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ মানসম্মত শিক্ষকরা এখানে পাঠদান করে থাকেন। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষকদের বেতন দিতেই এ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, একইভাবে ভর্তি ফি বাড়ানো হয়েছে রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এখানে প্রথম থেকে দশম  শ্রেণি পর্যন্ত মাসিক বেতন ছিল ৮০০ টাকা। এ বছর বাড়িয়ে করা হয়েছে এক হাজার ২০০। খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে ২০০ টাকা বেতন বাড়ানো হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১০০ টাকা বেতন বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে ভর্তি ফি ও বেতন বাড়ানো হয়েছে শান্তিনগরে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েও।

এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি নীতিমালা থাকলেও কিন্ডারগার্টেনে কোনো নীতিমালা নেই। সেখানে চলছে ইচ্ছামতো ভর্তি ফি আদায়।

সর্বশেষ খবর