শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
কলকাতার চিঠি

মমতার রাজত্বে কারও রেহাই নেই

সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত

কথায় বলে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে নেতা নয়, সাধারণ মানুষ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নেতাদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আর নয়, তৃণমূল হটাও পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও। লুট, সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ, আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ কী করেননি মা-মাটি মানুষের ‘মা’? এ সরকার আর এক মুহূর্ত থাকলে পশ্চিমবঙ্গ ধ্বংস হয়ে যাবে। অনাহার-অর্ধাহারে গত পাঁচ বছরে শত শত লোক মারা গেছে। তৃণমূলের হাতে খুন হয়েছেন কয়েকশ লোক। বেশির ভাগই হয়েছে কংগ্রেস এবং বামদের।

তাই সোমবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গকে সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচাতে দলের প্রবীণ ১৫ জন নেতাকে ডেকেছিলেন। প্রদেশে কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, সাবেক সভাপতি সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মানস ভুইঞা ছাড়াও ছিলেন সংসদ সদস্যরা। ছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান, সংসদ সদস্য মালদার নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালুবাবু) প্রমুখ। রাহুল গান্ধী দেড় ঘণ্টা ধরে পুরো বৃত্তান্ত শুনে বলে দিয়েছেন, দাস ফার অ্যান্ড নো ফারদার। ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ঠকেছি। বিষয়টি নিয়ে তিনি তার মা সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কথা বলে এ সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আবু হাসেম খান চৌধুরী টেলিফোনে বলেছেন, আমাদের স্লোগান তৃণমূল হটাও, বাংলা বাঁচাও। গ্রামের সাধারণ মানুষও সেই কথা বলছেন। আমি দেখেছি, গ্রামে, আধা শহরে মানুষের জোট হয়ে গেছে। বাকি কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়াজির একটা সিল। রাহুল গান্ধী আমাদের সঙ্গে একমত। গোটা পশ্চিমবঙ্গ তাকিয়ে ছিল এদিন দিল্লিতে কী হয়। তারা এক মুহূর্ত তৃণমূলকে বরদাস্ত করতে রাজি নয়। মোটামুটিভাবে যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, চিরশত্রু বামপন্থিদের সঙ্গে কংগ্রেস জোটবদ্ধ হতে চলেছে। এ ব্যাপারে কংগ্রেস নেতৃত্ব আশাবাদী। টেলিভিশনের পর্দায় গোটা রাজ্যের মানুষ দেখলেন রাহুল গান্ধী বলছেন, তৃণমূলের সঙ্গে আর নয়, তখন তারা হর্ষধ্বনি করে ওঠেন। সোমেন মিত্র বলেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে গিয়ে যে পাপ ও অন্যায় করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। অন্যদিকে, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রকাশ্য জনসভায় বলেছেন, বাংলাকে বাঁচাতে হলে তৃণমূলকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। কংগ্রেসকে তিনি বলেছেন, আপনাদের অবদান স্পষ্ট করুন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কিছুটা কথাবার্তা এগিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, বাংলাকে রক্ষা করতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোই এখন অগ্রাধিকার। কংগ্রেস ও সিপিএমের সঙ্গে ১৭টি বাম দল মিশে একই সুরে বলছে, বাংলাকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে তৃণমূলকে হটাতেই হবে। ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলিসহ একাধিক বুদ্ধিজীবী এবং ১১৩টি গণসংগঠন মিলেমিশে একই আওয়াজ তুলেছেন— মমতা হটাও, বাংলা বাঁচাও। মমতার রাজত্বে বিচারক থেকে শিক্ষক, সাধারণ মানুষ, গৃহবধূ, কলেজছাত্রী কারও রেহাই নেই। এ পরিস্থিতিতে এ লেখা যখন লিখছি তখনই জানা গেল তৃণমূলের এক নেতার বাড়িতে ৮৫টি তাজা বোমা পাওয়া গেছে। ওই নেতা পলাতক। সিরিয়ায় যা ঘটছে তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনো তফাত নেই। তৃণমূলের নেতারা প্রকাশ্যেই অস্ত্র পকেটে নিয়ে চলাফেরা করেন। বর্ধমানের এক তৃণমূল নেতা পকেটে রিভলবার নিয়ে বিমানে উঠে পড়েছিলেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বঙ্গেশ্বরীর কাছের লোক বলে পরিচিত। দিল্লির বৈঠকে রাহুল বলেছেন, ২০১১ সালে জোট করে যে ভুল করেছি, তার প্রায়শ্চিত্ত আমাদের করতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। সেদিন এ জোট করেছিলেন একজন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। রাহুল বাংলার নেতাদের কাছে বলেছেন, আমার কাছে অগ্রাধিকার হলো রাজ্য এবং সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করা। তার জন্য যা করার আমরা করব। তিনি বলেছেন, টাকা দিয়ে সংসদ সদস্য বিধায়ক থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাদেরও কিনে ফেলার চেষ্টা করছে তৃণমূল। কোনো কোনো মহল থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কংগ্রেস-তৃণমূল আবার জোট হোক। তারা হলো একশ্রেণির ব্যবসায়ী যারা মমতার আমলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ব্যাপারটা আর গোপন নেই। বাংলার মানুষ আর কত রক্ত দেবে? আমরা কোনোমতেই চাপের কাছে নতিস্বীকার করব না। মানুষের জোট যখন হয়েছে তখন তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তৃণমূল-বিজেপি উভয়ই শত্রু। দুটো দলকেই উত্খাত করতে হবে। বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট নিয়ে কোথাও প্রচার হচ্ছে সিপিএমের সঙ্গে জোট হচ্ছে। আসলে জোট হচ্ছে বামদের সঙ্গে। এ জোট ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এই ১৫ নেতা রাহুলকে বুঝিয়েছেন, কংগ্রেসের একটা ঐতিহ্য আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর