মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সুলতানাকে মেয়ে দাবি করলেন সৌদি প্রবাসী

প্রতিদিন ডেস্ক

দীর্ঘ ৩৭ বছর পর স্বজনের খোঁজে চট্টগ্রামে আসা নেদারল্যান্ডসে (ডাচ) বেড়ে ওঠা সুলতানা ভ্যান দার লেস্তকে নিজের মেয়ে বলে দাবি করেছেন সৌদি আরব প্রবাসী নারী গুলবাহার। গত রবিবার সৌদি আরবের স্থানীয় সময় রাত ৩টায় এনটিভির মক্কা প্রতিনিধিকে বাড়িতে ডেকে এ কথা জানান তিনি। এ সময় গুলবাহারের সঙ্গে ছিলেন তার পাঁচ ছেলে। খবর এনটিভি। ‘নেদারল্যান্ডস থেকে চট্টগ্রামের দোহাজারীতে গিয়ে নিজের পরিবারকে খুঁজছেন এক নারী’— গণমাধ্যমে এমন খবর ও ছবি দেখে সুলতানাকে নিজের মেয়ে বলে শনাক্ত করেন সৌদিপ্রবাসী এই গুলবাহার। তিনি ও তার ছেলেরা জানান, চট্টগ্রামের দোহাজারী রেলস্টেশন এলাকায় বাস করতেন তারা। গুলবাহারের স্বামীর নাম চান মিয়া। এই দম্পতির মোট পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে ছিল। এদের মধ্যে ছোট মেয়ের নাম ছিল শবে মেরাজ। তবে চান মিয়া আদর করে মেয়েকে ডাকতেন পুতুনী। দিনের বেশির ভাগ সময় পুতুনী রেলস্টেশন এলাকায় খেলাধুলা করত। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের দোহাজারীর বাড়ির এলাকা থেকে হারিয়ে যায় সে। সে সময় তার বয়স ছিল সাত-আট বছর। গুলবাহার দাবি করছেন, এই পরিবারের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে পুতুনীই নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশে স্বজনদের খোঁজে আসা সুলতানা। গুলবাহারের ছেলেরা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এর সত্যতা নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন। পুতুনীর বাঁ হাতে টিকার দাগ আছে বলে জানান তারা। পরিবারের সদস্যরা জানান, বোন হারিয়ে যাওয়ার দুই বছর পর সৌদি আরবে চলে আসে পুরো পরিবার। এরপর থেকে পবিত্র কাবা শরিফসহ বিভিন্ন স্থানে পুতুনীকে খুঁজে পেতে প্রার্থনা করেছেন তারা।

প্রসঙ্গত, স্বজনদের খোঁজ পেতে গত ১ ফেব্রুয়ারি নেদারল্যান্ডস থেকে স্বামী-সন্তানসহ বাংলাদেশে আসেন সুলতানা। পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে তিনি জানান, জন্মের পর তার মা-বাবা মারা যান। দাদা-দাদির কাছে চার বছর পর্যন্ত বেড়ে ওঠেন। চার বছর বয়সে মুসলেম আলী খান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে দাদি রাহিমা খাতুন তাকে তুলে দেন ডাচ দম্পতি কেয়া ও ক্রিসের কাছে। এরপর সুলতানা পরিচয়ে বেড়ে ওঠেন তিনি। সফলভাবে পড়ালেখা শেষ করে নেদারল্যান্ডসের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। পরে বিয়ে করেন ইউরি জ্যাকভকে। জ্যাকভ একজন ডিজাইনার। এখন আবেদ আবিলা জ্যাকব নামের এক সন্তান রয়েছে তাদের। তিনি জানান, তার কাছে আছে একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামা। সেখানে তার বাবা ও মায়ের মৃত্যুর কথা বলা আছে। এখন তার দাদা-দাদি বেঁচে না থাকলেও ছোট ভাই বা বোন এখনো বেঁচে আছে, এমন আশা তার। সে জন্য পরিবারের সদস্যদের খুঁজতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারীর অলিগলি ঘুরেছেন তিনি। সুলতানার কাছে থাকা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, সুলতানার জন্ম ১৯৭৫ সালের ৮ জানুয়ারি, চট্টগ্রামে পটিয়া উপজেলার দোহাজারীতে। তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভরণপোষণে ব্যর্থ হয়ে দাদি রহিমা খাতুন ১৯৭৯ সালে সুলতানাকে নেদারল্যান্ডস ইন্টার কান্ট্রি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের কাছে দত্তক দেওয়ার জন্য হস্তান্তর করেন। পরে সেখান থেকে নেদারল্যান্ডসের কেয়া ও ক্রিস দম্পতির কাছে দত্তক দেওয়া হয় সুলতানাকে।

সর্বশেষ খবর