রবিবার, ২০ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
বনানীতে গ্যাস বিস্ফোরণ

আতঙ্ক কাটেনি ৯ নম্বর বাড়ির বাসিন্দাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্যাস বিস্ফোরণের দুদিন পরও আতঙ্ক কাটেনি বনানীর ২৩ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়ির বাসিন্দাদের। এখনো শিউরে উঠছেন ওই বাড়ির অর্ধ শতাধিক বাসিন্দা। রাতে টুং টাং শব্দে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠছেন। অজানা দুঃস্বপ্ন ও আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত অতিবাহিত করছেন তারা।

বনানীর এই ছয়তলা বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লিক থাকা গ্যাস লাইন থেকে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে একজন দগ্ধ ও সাতজন আহত হন। ভবনটির চারটি তলার বিভিন্ন অংশের দেয়াল ধসে পড়ে। পরে ভবনের সব বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা যে যার আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন থেকে গ্যাস ঢুকেই এই বাসায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ভবনটির বাসিন্দা শামীম আনোয়ারুল হক বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো শিউরে উঠছি, এখনো আতঙ্ক কাটেনি। ভবনটিতে বিকট শব্দে যখন বিস্ফোরণ ঘটে তখন পাশের ফ্ল্যাটের এসির আউটডোর তার ঘরের জানালার কাচ ও গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢুকে যায়। এ সময় ওই ঘরে দুজন ঘুমিয়ে ছিলেন।’ এ ঘটনায় এই ভবনে বসবাসরত প্রায় ৫০ জন বাসিন্দার বেঁচে যাওয়াকে তিনি সৌভাগ্য বলে মনে করেন। ‘আমরা এখন রিফিউজি। ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছি। আশ্রয় আপাতত আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি। এই ভবনে কবে উঠতে পারব, জানি না। আদৌ উঠতে পারব কি না, সেটাও বলতে পারি না’— এ কথাগুলো বলছিলেন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাড়ির মালিক শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকছি। জরুরি জিনিসপত্র ও কাগজ ভবনটি থেকে আপাতত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’ ভবনটিকে গত শুক্রবার বুয়েট ও রাজউক বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করেছে। এরপরও তারা এই ভবনটির নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অ্যাসেট ডেভেলপারকে চিঠি দেবেন। চিঠিতে ভবনটি পরীক্ষা করার কথা বলা হবে। তারা যদি মনে করে যে ভবনটি ভাঙার প্রয়োজন আছে, তাহলে পুরো ভবনটিই ভেঙে ফেলা হবে। ভবনটিতে মোট ২০টি ফ্ল্যাট আছে। ভবনের পশ্চিম পাশের বি-১ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা নাসের মোহাম্মদ খান জানান, এখন তিনি বনানী ছয় নম্বরে এক আত্মীয়ের বাসায় থাকবেন। তার দাবি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ যেন তাদের আপাতত থাকার ব্যবস্থাটা করে দেন। কারণ তারা আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আত্মীয়ের বাসায় বেশি দিন থাকাটাও বোঝা হয়ে যায়। তিনি বলেন, বিস্ফোরণে তার ঘরের দরজা-জানালা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। তবে কাঠামোতে তেমন ক্ষতি হয়নি। সুযোগ দিলে তারা তাদের ফ্ল্যাটটি ঠিকঠাক করে থাকতে পারবেন। এ ব্যাপারে বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খান বলেন, ভবনটির মালিকপক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। এ কারণে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। নিজেরা বসে সব ঠিকঠাক করার পর থানায় অভিযোগ করার কথা রয়েছে মালিকপক্ষের। তবে এ ঘটনায় বাড়ির বাসিন্দা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ির কাজে পাশের রাস্ততার গ্যাস সরবরাহ পাইপে ফুটো হওয়ার কারণে গ্যাস নিঃসরিত হয়ে ভবনে ঢুকে পড়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, তিতাস কোনোভাবেই এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। অন্যদিকে তিতাস বলছে, সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই ঘটনাটি ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর