শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিনা বিচারে বন্দীদের আইনি সহায়তা দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক মানুষ মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে পড়ে আছে। এভাবে বিনা বিচারে যারা দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দী রয়েছে, তাদের তালিকা করে আইনি সহায়তা দিতে হবে। তিনি এ ধরনের আইনি সহায়তা দিতে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, সব মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কেউ বিনা বিচারে কারাগারে আটক থেকে কষ্ট না পায়। গতকাল সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সুবিধা প্রদান দিবস উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক অনেকের পরিবারের সদস্যরা জানেই না যে, কীভাবে এ দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কীভাবে আইনগত সহায়তা পেতে হয়। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের সব মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বিচার পাওয়ার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত করতে, বিচারপ্রার্থীর সুবিচার নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার আছে। শেখ হাসিনা নিজেকে একজন বিচারবঞ্চিত ভুক্তভোগী আখ্যায়িত করে বলেন, সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে আমাদের বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এমনকি খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি প্রদান ও জনপ্রতিনিধি বানিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আজ যখন কোনো ঘটনা ঘটলে সবাই বিচার চায়, তখন আমার সেই সময়কার কথা মনে পড়ে। কারণ আমি তো তখন বিচার চাওয়ার অধিকার পাইনি। আমার বিচার চাওয়ার অধিকার হরণ করে নেওয়া হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক বিভাগ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে লিগ্যাল এইড কল সেন্টার জাতীয় হেল্পলাইনের উদ্বোধন করে বলেন, এ হেল্পলাইনে (১৬৪৩০) ফোন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাবেন দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় বিচারপ্রার্থী নাগরিকরা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক, লিগ্যাল এইড সার্ভিসেসের পরিচালক মালিক আবদুল্লাহ আল আমিন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে লিগ্যাল এইড সার্ভিসের সুবিধাপ্রাপ্ত দুজন ভুক্তভোগী নরসিংদীর শিউলী আক্তার ও গার্মেন্ট কর্মী রঞ্জিতকুমার রায় নন্দী তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে যেন আইনি সেবা পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে অসহায়-দরিদ্র মানুষকে আইনি সহায়তার জন্য অর্থ খরচ করতে না হয়। তিনি বলেন, আমরা চাই, সব ক্ষেত্রে একটা জবাবদিহিতা থাকবে এবং দেশটা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে। সামাজিক বৈষম্য দূর হবে। সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত চৌকি আদালতগুলোয় এবং শ্রমিকদের কল্যাণে শ্রম আদালতগুলোয় আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর, গতিশীল ও সেবাবান্ধব করার লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলায় একটি করে স্থায়ী ‘লিগ্যাল এইড অফিস’ স্থাপন করা হয়েছে। এসব অফিস পরিচালনার জন্য ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং বিচারকদের এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়মী লীগ সরকারের লক্ষ্য ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। সরকার বিচার বিভাগের উন্নয়ন, বিচারক নিয়োগের প্রতিটি ক্ষেত্রের আধুনিকায়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর