মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়নি ৫০ দিনেও

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়নি ৫০ দিনেও

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মৃত্যুর ৫০ দিনেও হত্যাকারী শনাক্ত হয়নি। এদিকে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ৩৮ দিনেও পাওয়া যায়নি। মামলাটি আড়ালে ফেলে দেওয়ার জন্য ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দিতে দেরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশিষ্টজনরা। সূত্রমতে, শনিবারও দিনভর সিআইডি কুমিল্লা  কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেছেন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম। তারা মেয়ে হত্যা মামলার অগ্রগতি জানতে এসেছিলেন। তারা অফিসে এসে কোনো আশার বাণী নিয়ে বাসায় ফিরতে পারেননি। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে হারিয়েছি। মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলে মনে শান্তি পেতাম। সিআইডি অফিসে গিয়েছি মামলার খবর নিতে। সেখানে জানানো হয়েছে, তারা কাজ করছেন। আরও সময় লাগবে। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রেখেছি, আল্লাহ বিচার করবেন।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার জয়েন্ট সেক্রেটারি মাইমুনা আক্তার রুবি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি করা হচ্ছে, যেন তনু হত্যা অন্য একটি ঘটনার নিচে চাপা পড়ে যায়। তনু হত্যার বিচারে মানুষ আন্দোলন করেছে, তনু হত্যার বিচার না হলে বাংলাদেশের মানুষের নৈতিক পরাজয় হবে। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি আলী আকবর মাসুম বলেন, প্রথম থেকেই তনু হত্যা মামলা নিয়ে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো আন্তরিক নন। তা না হলে দুবার ময়নাতদন্ত করতে হয় না। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এত সময় লাগত না। সাগর-রুনির মামলার মতো এটিও অনিশ্চয়তার পথে হাঁটছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট পেলে এক সঙ্গে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে কবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া হবে সে বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। উল্লেখ্য, ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার কাছ থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করেন তার বাবা ইয়ার হোসেন। পরদিন ২১ মার্চ দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ২১ মার্চ তনুর বাবা কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের নামে মামলা করেন। মামলা পুলিশ, ডিবি হয়ে সিআইডির হাতে যায়। ছায়া তদন্ত করে র‌্যাব ও পিবিআই। কিন্তু কোনো ইতিবাচক খবর মেলেনি। প্রথম ময়নাতদন্তে তনুকে ধর্ষণের আলামত এবং মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হয়।

তনুর গ্রামের বাড়িতে তদন্ত কর্মকর্তা : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন তার মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মো. ইব্রাহিম। গতকাল দুপুরে জেলার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে তনুর চাচাতো ভাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মিনহাজের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। এ বিষয়ে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আমার ভাতিজার সঙ্গে কথা বলেছেন। তনুর মৃত্যুর দিন সে আমাদের বাসায় ছিল।’ মামলার অগ্রগতি নিয়ে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আর কী বলব! মেয়েকে হারিয়েছি। মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলে মনে শান্তি পেতাম। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রেখেছি। আল্লাহ বিচার করবেন।’ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মো. ইব্রাহিমের বক্তব্য জানার জন্য তার ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ২০ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার কাছ থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করেন তার বাবা ইয়ার হোসেন। পরদিন ২১ মার্চ দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ২১ মার্চ তনুর বাবা কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। মামলা পুলিশ, ডিবি হয়ে সিআইডির হাতে যায়। ছায়াতদন্ত করে র‌্যাব ও পিবিআই। প্রথম ময়নাতদন্তে তনুকে ধর্ষণের আলামত এবং মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হয়। তনুর মৃত্যুর ৫০ দিনেও হত্যাকারী শনাক্ত হয়নি। এদিকে ৩৯ দিন পার হলেও পাওয়া যায়নি দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।

সর্বশেষ খবর