শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাত পোহালেই ভোট

পঞ্চম ধাপে আজ ৭২০টিতে নির্বাচন, শঙ্কায় ভোটার ও প্রার্থীরা

গোলাম রাব্বানী

রাত পোহালেই ভোট

পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ। আজ রাত পোহালেই কাল ভোট। গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রচারণা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।

কাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে দেশের ৭২০ ইউপিতে। এর আগে ২২ মার্চ প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে তৃণমূলের এ ভোট উৎসব শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ইউপি ভোটে সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটেছে শতাধিক। তাই উৎসবমুখর এ নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা-অজানা শঙ্কা কাটছে না ভোটার ও প্রার্থীদের। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট গ্রহণে ব্যাপক সহিংসতার পর পঞ্চম ধাপের ভোট নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। কয়েক ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক জাল ভোট ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় শঙ্কিত সবাই। অনেক প্রার্থী এ ধাপেও কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন। প্রতিনিয়ত সংঘাত-সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বিগ্ন তারা। এ ছাড়া ভোট নিয়ে টানটান উত্তেজনা তো রয়েছেই। পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা।

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা জানান, চেয়ারম্যান পদে ৭২০ ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ৩ হাজার ২৫৪ জন। এর মধ্যে ১৫টি দলের প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৭২৭ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ হাজার ৫২৭ জন। এ ধাপে ৪২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত প্রায় সব ইউপিতে প্রার্থী রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের, ১০০ ইউপিতে প্রার্থী নেই বিএনপির।  এ ছাড়া জাতীয় পার্টির ১৭৭, জাসদের ২১, বিকল্পধারার ২, ওয়ার্কার্স পার্টির ১৩, ইসলামী আন্দোলনের ১২২, জেপির ২, ইসলামী ফ্রন্টের ১১, এলডিপির ৬, সিপিবির ৫,  জেএসডির ১, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৭, অন্য দলের কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন। এদিকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গতকাল র‌্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল শুরু করেছেন। তারা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। কাল শনিবার ৭২০ ইউপিতে ভোট গ্রহণের জন্য আজ বিশেষ নিরাপত্তায় জেলা থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হবে। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল রাত ১২টায়। এ দিন ভোর থেকেই গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা।

প্রচার-প্রচারণা শেষ : ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানিয়েছে, গতকাল মধ্যরাতে বন্ধ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার, সভা-সমাবেশ ও শোডাউন নিষিদ্ধ। ভোটের পরে ৪৮ ঘণ্টাও কোনো মিছিল করা যাবে না। প্রচারের সময় শেষ হওয়ার আগে বহিরাতগতদের ছাড়তে হবে নির্বাচনী এলাকা। ভোট উপলক্ষে এ দিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় থাকছে সাধারণ ছুটি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে : গোলযোগ-সহিংসতার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় এ নির্বাচনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গতকাল মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনাসংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ২০ জন করে নিরাপত্তা সদস্য রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা সদস্য বাড়াবে প্রশাসন। এদিকে এ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন, জাল ভোট, ব্যালট ছিনতাইসহ সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে কঠোর অবস্থান না নেওয়ায় সমালোচনার মুখে রয়েছে ইসি। তবে ইউপি ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় উপজেলাভিত্তিক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তিন প্লাটুন করে বিজিবি রাখা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে র‌্যাবের তিনটি টিমও। প্রতি ইউনিয়নে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। আজ বিকালের মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, এপিবিএন, আনসার ব্যাটালিয়ন ও আনসার-ভিডিপির প্রহরা। টহলে থাকবে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স।

শেষ মুহূর্তেও প্রার্থীদের শঙ্কা : এদিকে নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। প্রায় প্রতিটি ইউপিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনেক প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন স্থানে মারধর করা হয়েছে। ভোট  কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর