মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই সক্রিয় এমপির অনুসারীরা

বাঁশখালীতে নির্বাচন কর্মকর্তা লাঞ্ছিত

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

বাঁশখালীর সরকারদলীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে নির্বাচন কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার এক সপ্তাহ পার হতে চললেও এ বিষয়ে করা মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এমপিসহ অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হলেও এখনো সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। তারা মামলার বাদী নির্যাতিত নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করে বেড়াচ্ছে। তবু কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টো ঘটনার মোড় ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় নিজের অনুসারীদের দিয়ে গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে এমপির ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে চিহ্নিত বাঁশখালীর পৌর মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও অভিযোগকে ‘মনগড়া’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনাকে তিনি এমপি মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের একাংশের ‘ষড়যন্ত্র’ বলেও অভিহিত করেন। এতে বাঁশখালীর সাধারণ মানুষের একাংশ যেমন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তেমনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রকাশ করেছেন হতাশা। প্রসঙ্গত, ১ জুন এমপির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করা এবং তার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী প্রিসাইডিং অফিসার থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা পর্যন্ত নিয়োগ না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় ২ জুন কোনো মামলা না হলেও ৩ জুন ইসির নির্দেশে বাঁশখালী থানায় মামলা হয়। মামলায় এমপি মোস্তাফিজসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। অন্যরা হলেন এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ও বাহারছড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ?তাজুল ইসলাম এবং ওলামা লীগ সভাপতি মাওলানা আকতার হোসাইন। এ ছাড়া অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করা হয়। মারধরের শিকার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এদিকে মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও বাঁশখালী থানার ওসি আলমগীর হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। যথাযথ প্রমাণ মিললে আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম হতাশার সঙ্গে বলেন, ‘আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি, তাই মামলা হয়েছে। এখন আসামিদের গ্রেফতার করা হবে কি না বা মামলার অগ্রগতি কতটুকু তা বাঁশখালীর ওসি বলতে পারবেন।’

এদিকে অভিযুক্ত এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাটিকে মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য এবং ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজ অনুসারীদের দিয়ে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনার পরদিন সকাল থেকে বাঁশখালী সদরে তার অনুসারীরা কয়েক দফা মিছিল-সমাবেশ করেছেন। মূলত এমপির ব্যক্তিগত সহকারী ?তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে এই মিছিল-সমাবেশ হয়। গতকাল নগরীতে সংবাদ সম্মেলনে তার আরেক অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী দলের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের ‘দুষ্কৃতকারীরা’ ইউপি নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীদের হারানোর জন্য জামায়াতের সঙ্গে মিলে গেছে। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে কিছু বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর হাতকে দুর্বল করতে স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছেন। তাই এমপির বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তার ‘মনগড়া’ বক্তব্যের তদন্তপূর্বক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর