শিরোনাম
বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘বড় বাপের পোলা’ বসুন্ধরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘বড় বাপের পোলা’ বসুন্ধরায়

রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির ১ নম্বর হল ‘গুলনকশা’র পুরান ঢাকার ইফতার বাজারে ঢুকলে হঠাৎ মনে হবে যে আপনি চকবাজারের ইফতার বাজারে পৌঁছে গেছেন। কারণ চকবাজারে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’-এর মতো বিখ্যাত ইফতার আইটেমটি বিক্রেতারা যেভাবে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করেন, বসুন্ধরার গুলনকশাতেও একই কায়দায় বিক্রি হচ্ছে মজাদার এই খাবার। ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়’... এমন ডাকে কৌতূহলী ক্রেতা একদিকে যেমন বিনোদন পাচ্ছেন, অন্যদিকে নতুন ঢাকার অনেকেই মোগল আমলের এই খাবারটির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। তবে পুরান ঢাকার ভিড়, যানজট ও ভ্যাপসা গরমের মধ্যে যেখানে ক্রেতাকে রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি করে ইফতার কিনতে হয় সেখানে কনভেনশন সিটিতে ক্রেতারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ইফতার কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। এমনকি ক্রেতাদের জন্য এখানে বসেও ইফতার করার সুযোগ আছে। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানান, ক্রেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় এই নিয়ে ২য় বারের মতো এই আয়োজন হচ্ছে। যা চলবে আগামী ২৭ রোজা পর্যন্ত। বৃষ্টি উপেক্ষা করে গতকাল বিকালে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলো থেকে মানুষ এই ইফতার বাজারে আসেন। স্বামী-স্ত্রী, মা-মেয়ে, বাবা-ছেলে একসঙ্গে এসে নিজেদের পছন্দ মতো দুহাত ভর্তি খাবার কিনে ঘরে ফিরেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার শারমিন আক্তার এসেছিলেন ইফতার কিনতে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রথম বারের আয়োজনে এসে এখানকার খাবার এবং তার মান ভালো লেগেছিল, এ কারণে এবারও এসেছেন।

পুরান ঢাকার ইফতারের বিভিন্ন আইটেমের মধ্যে এবার নজর কেড়েছে রংধনু রসুই স্টলের ‘মাটন লেগ’ পিছ। রুপালি ফয়েলে মোড়ানো একটি বিশাল লেগের দাম রাখা হচ্ছে ১৫০০ টাকা। এ ছাড়া এই স্টলে আরও আছে মুরগির রোস্ট; প্রতিটি দেড়শ টাকা। ছোলা ভুনা এক কেজি ২৮০ টাকা। লাহরি ছানা এক কেজি ৩২০ টাকা। চিকেন সাসলিক; প্রতিটি ৬০ টাকা এবং ফিস ফিংগার; প্রতিটি ৫০ টাকা। ইফতার বাজারে বিখ্যাত দোকানগুলোর মধ্যে আরও আছে ‘মামা হালিম’। এখানে ছোট, বড় ও মাঝারি তিন আকারে হালিম বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নান্না মিয়ার বিরিয়ানির চাহিদাও ভালো। বিশেষ করে চকবাজারের হোসেন বাবুর্চির হাতে তৈরি ‘বড় বাপের পোলায় খায়’—এর হাঁকডাকে অনেক ক্রেতাই খাবারটি দেখতে ও কিনতে ভিড় জমাচ্ছিলেন। এই খাবারটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আর স্বাদের কারণে এবারও নানুস ফুড ফ্যাক্টরিতে বিক্রি হওয়া জর্দা ও পায়েসের চাহিদা ভালো। এই স্টলের এক বিক্রেতা মো. নাজিম এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রথম দিন হওয়ায় আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে আসতে পারিনি। কিন্তু যতটুকু খাবার এনেছি তা ভালোই বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া এই আয়োজনে মুখরোচক খাবারের তালিকায় আরও আছে তেহেরি, মুরগির তান্দুরি, চিকেন নাগেট, বিরিয়ানি, নানা রকম জিলাপি, বেগুনি, পিয়াজু, চপ, সবজি পাকোড়া, নানা ধরনের পরোটা, বিভিন্ন শরবত, বোরহানি, দই বড়া, শাসলিক, হালুয়া, মাছের বিভিন্ন পদ, সালাদ, ফিন্নি ইত্যাদি। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে বেশ কিছু স্টলে আস্ত কোয়েল ভাজাও বিক্রি হচ্ছে। গুলনকশার পুরো হলে মোট ৮০টি অধিক স্টলের ইফতার বিক্রির কথা থাকলেও এখনো অনেক স্টলের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই-একদিনের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ শেষে অন্যান্য স্টলগুলো ইফতার বিক্রি শুরু করতে পারবে। তারা জানান, দর্শকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় এবার স্টলের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর ফলে ঐতিহ্যবাহী আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এবার ইফতার বাজারে অংশ নিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর