রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাজেটে করের বোঝা চাপানো হয়েছে, হয়রানি বাড়বে

পাঁচ বাণিজ্য সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বস্ত্র ও পোশাক খাতের দাবিসমূহ বিবেচনায় না নিয়ে সরকার উল্টো শিল্পের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। এতে রপ্তানির উেস করহার, কাঁচামাল আমদানি শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে। এক কথায় প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হবে। বাড়বে হয়রানি। পোশাক খাতের প্রত্যাশিত দিকনির্দেশনা নেই। এমনকি এ খাতের দেওয়া বাজেট প্রস্তাবের একটিও যথাযথভাবে বিবেচনায় নেয়নি সরকার।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে বস্ত্র ও পোশাকশিল্প খাতের পাঁচটি বাণিজ্য সংগঠন যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমই, বিজিএপিএমইএ ও বিটিটিএলএমইএ। এ সংগঠনগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি, এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এস এম আসলাম সানী, বিটিটিএলএমইএ চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ ও বিটিএমএ সহ-সভাপতি ফজলুল হক। এতে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিজিএপিএমইএর দ্বিতীয় সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মনি, বিইওজিডব্লিউআইওএ সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ, বিজিএপিএমইএর উপদেষ্টা রাফেজ আলম চৌধুরী প্রমুখ। এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, ‘কর বড় কথা নয়। আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, সেটা বড় কথা। এ খাতে কত লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, তাও বিবেচনায় নিতে হবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে সরকারকেই। অবান্তর কিছু যেন বাজেটে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি চাই।’ এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সরকারকে দেখতে হবে বিগত দিনে বিনিয়োগ বেড়েছে কি না। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এ কারণে ট্যাক্সের জন্য শিল্পে অতিরিক্ত চাপ দিলে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না। তিনি বলেন, ‘এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়। কিন্তু প্রস্তাব প্রতিফলনের জায়গায় আশাহত হই। এটিকে বেগবান করতে হবে।’ বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বস্ত্র ও পোশাক খাতের সমৃদ্ধির জন্য আশানুরূপ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী শিল্পের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে ও ব্যবসা প্রক্রিয়া জটিল করে শিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। বাজেটে পোশাক খাতের দেওয়া ১০টি প্রস্তাবের একটিও যথাযথভাবে গৃহীত হয়নি। উেস কর বৃদ্ধিকে পোশাকশিল্পের বিকাশে বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিমূল্যের ওপর উেস করহার দশমিক ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। এর যৌক্তিকতা নেই। পোশাক খাতের স্বার্থে প্রতিবছর উেস কর না বাড়িয়ে মুনাফার ওপর করারোপ অথবা কাটিং-মেকিংয়ের ওপর করারোপের প্রস্তাব দেন তিনি। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণ করায় প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরের ইয়ার্ন ও ফ্যাব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং মিলগুলো পণ্য রপ্তানিতে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে সামগ্রিক টেক্সটাইল খাতে মন্দা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে এ খাতে বিনিয়োগ বা সম্প্রসারণ আশানুরূপ নয়। এক কথায় বন্ধ রয়েছে। যে মিলগুলো পাইপ লাইনে স্থাপন পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলোতে আগামীতে স্থাপিত হবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। এ সময় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘সরকারকে ঠিক করতে হবে তারা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান চায়, নাকি প্রত্যক্ষ কর। আমাদের মতে প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি নজর না দিয়ে পরোক্ষ করের মাধ্যমে শিল্পকে সহায়তা করাই যৌক্তিক হবে।’ প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিকারকদের হয়রানি বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘোষিত বাজেটে ৮২(সি) ধারা পরিবর্তন করে ন্যূনতম করের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে, যা পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা বৃদ্ধি করবে। এ জন্য আয়কর আনার সংশোধনী আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। শিল্পে বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি তিনি বলেন, শিল্প ও বিনিয়োগ নীতি বা সিদ্ধান্তগুলো বছর বছর পরিবর্তন না করে সেগুলো কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ বছর কার্যকর রাখা জরুরি, যাতে একজন উদ্যোক্তা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এস এম আসলাম সানী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বর্জ্য শোধনাগারের (ইটিপি) কেমিক্যালের আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া রং, কেমিক্যালের ওপর শুল্ক ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে নিট খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। বিটিএমএর সহ-সভাপতি ফজলুল হক বলেন, সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। এখন রপ্তানির উেস কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ চাপিয়ে দেওয়া হলো। তাহলে সরকার কি দেশে শিল্প চায় না? পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সুতা আসছে। দেশের মিলগুলোর সুতায় গোডাউন ভর্তি হয়ে রয়েছে। তাই এবারের বাজেট শিল্পবান্ধব বলা চলবে না।

সর্বশেষ খবর