সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বুটিকে আগ্রহ বাড়ছে

মোস্তফা মতিহার

বুটিকে আগ্রহ বাড়ছে

ভারতীয় সিরিয়ালের গরম হাওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে এ দেশের তরুণীরা যখন বাজিরাও মাস্তানি, সিল্কিনি আর সারারায় আক্রান্ত, ঠিক তখনই কিছু মানুষ শেকড়ের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশি পণ্যকে প্রত্যাখ্যান করে দেশীয় ঐতিহ্যের পোশাকের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে বাংলার কৃষ্টিপ্রিয় দেশপ্রেমীরা। মাটির টানে, শেকড়ের সন্ধানে পোশাকে বাংলার রূপ, রস, গন্ধ তুলে ধরে দেশজ সংস্কৃতির চর্চা করছে বলে শত প্রতিকূলতায়ও বুটিকস শিল্প তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। দেশজ, চেতনা ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহকরা তাই ঝুঁকে পড়েছে বুটিকসের দিকে। দেশি কাপড়ে দেশীয় সংস্কৃতির আঁকিবুঁকি দিয়ে যেন গোটা বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে বুটিক শিল্প। নিজের কাপড়ে, নিজের ঐতিহ্যের লালনে বুটিক শিল্প এগিয়ে এসেছে বলে বুটিকের প্রতি এবারের ঈদেও ফ্যাশনপ্রিয় বাঙালিদের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদা বিবেচনা করে বিভিন্ন বুটিক হাউস বরাবরের মতো এবারের ঈদেও বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের সমাহার ঘটিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে মিরপুর বুটিক সমিতি মার্কেটের বুটিক হাউসগুলো। বুটিকপ্রিয়দের চাহিদা বিবেচনা করে প্রায় শতাধিক দোকান নিয়ে গড়ে উঠেছে এ মার্কেট। শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট ও থ্রি-পিসের পাশাপাশি এখানে আরও পাওয়া যাচ্ছে বুটিকসের তৈরি বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ডস্টিচ ব্যাগ, পার্স, বেডশিট ও গৃহস্থালি জিনিসপত্র। এ মার্কেটের অন্যতম বুটিক হাউস ‘নায়রী’। বুটিকের শাড়ি, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি ও কিডস আইটেমসহ এ দোকানটিতে প্রায় ৩৫ রকমের পোশাক রয়েছে বলে জানান ‘নায়রী’র স্বত্বাধিকারী নুরুল হক খান মজলিশ। ঈদ উপলক্ষে বিক্রি বাড়লেও ঈদের পর এ মার্কেটে বিক্রি আশাব্যঞ্জক নয় বলে জানালেন ‘নায়রী’র স্বত্বাধিকারী নুরুল হক খান মজলিশ। এ দোকানটিতে বিভিন্ন ধরনের বুটিক শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৯৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। লাসা থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়, নরমাল থ্রি-পিস ১ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়, বাচ্চাদের থ্রি-পিস ৯০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়, ম্যাক্সি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

, শার্ট ৪৫০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকার মধ্যে, পাঞ্জাবি ৮৫০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়, বাচ্চাদের ফ্রক ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় ও বাচ্চাদের পাঞ্জাবি ৪৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। ‘নায়রী’র নুরুল হক খান মজলিশ জানান, দাম যত বাড়ে ব্যবসা তত কমে। সবকিছু্ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার ফলে বেচাকেনা আগের মতো হচ্ছে না বলে তিনি জানান। এ মার্কেটটির গ্রামীণ মেলায় বুটিকসের লেডিস টপস পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে, লেডিস গাউন পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়, থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়, হ্যান্ডস্টিচ ব্যাগ ও পার্স ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে, শাড়ি ৮০০ থেকে ৬ হাজার টাকায়, পাঞ্জাবি ৬৫০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, শার্ট ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায়, বেডশিট ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় ও বেবি ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। গ্রামীণ মেলার বিক্রয়কর্মী মো. আবু নাঈম জানান, নানা কারণে বুটিকসহ দেশীয় অন্যান্য ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে ঐতিহ্য থেকে বাংলাদেশ বিচ্যুত হয়ে পড়ছে—এমনটাই মনে করেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রামীণ মেলার এই বিক্রয়কর্মী বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে এ দেশে বুটিকের চর্চা ও ব্যবসা হয়ে আসছে। কিন্তু যতটা প্রসার হওয়ার কথা ছিল ততটা ঘটেনি। এ এলাকার অন্য বুটিক হাউস ‘অরণ্য’র স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, তার দোকানে বিক্রি আশাব্যঞ্জক। ক্রেতাদের ভিড় দেখিয়ে তিনি বলেন, বুটিকসের প্রতি মানুষের আগ্রহ রয়েছে বলেই ইন্ডিয়ান ড্রেসের প্রভাবেও বুটিক তার যথাস্থানেই রয়েছে। ‘অরণ্য’তে সুতি ও সিল্কের সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়, শাড়ি ১ হাজার ২৫০, ১ হাজার ৮৫০, ৪ হাজার ৫০০ ও ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। নিজের দোকানের বিক্রি নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট ‘অরণ্য’র স্বত্বাধিকারী। এ এলাকার অন্য বুটিক হাউস আঙ্গিনা’-তেও ছিল ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়। এ দোকানের স্বত্বাধিকারী আক্তারুজ্জামান জানান, তাদের দোকানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাঞ্জাবি। তারপর অন্য পোশাকগুলোও তুলনামূলক ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এখানে শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ থেকে ৫ হাজার টাকায়, থ্রি-পিস ১ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়, কিডস আইটেম ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকায়, পাঞ্জাবি ৯৫০ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায়। ঈদ উপলক্ষে ‘আঙ্গিনা’র এবারের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে স্পেশাল কটি থ্রি-পিস। এর দাম রাখা হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ টাকার মধ্যে। একেবারে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সব শ্রেণির মানুষেরই পোশাক তাদের সমাহারে রয়েছে বলেও জানান এ দোকানের স্বত্বাধিকারী। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ম্যাজিক অফারও ছেড়েছে ‘আঙ্গিনা’। এর মধ্যে শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজে তারা ১০% ছাড় দিচ্ছে, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের পোশাকে ২০% আর শার্টে ২৫%। এ এলাকার প্রায় বেশির ভাগ দোকানি জানান, ইন্ডিয়া থেকে যত ধরনের চকচকে ড্রেসই আসুক, স্টার জলসা ও জি-বাংলায় মানুষ যতই প্রভাবিত হোক, দেশের ঐতিহ্য তথা দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে শেকড়ের বন্ধনে আবদ্ধ বুটিকস শিল্পের চাহিদা চিরকালই থাকবে। নেতিবাচক কোনো প্রভাবে বুটিক হারিয়ে যাবে না বরং সম্মানের জায়গাতেই থাকবে—এমনটিই মনে করেন এ এলাকার বুটিক ব্যবসায়ীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর