শিরোনাম
শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মৌলভীবাজারের মণিপুরী তাঁতপল্লী জুড়ে ব্যস্ততা

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের মণিপুরী তাঁতপল্লী জুড়ে ব্যস্ততা

পাহাড় আর চা বাগান পরিবেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম পর্যটন উপজেলা কমলগঞ্জ। এখানে বসবাসরত আদিবাসীদের মধ্যে অন্যতম হলো মণিপুরী সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায়ের ৯৫ শতাংশ মহিলাই তাঁতশিল্পে জড়িত। আসন্ন ঈদুল ফিতরে মণিপুরী কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। তাই তাঁত শিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রায় ৩০টি গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে তাঁতের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজ। উপজেলার মাধবপুর, মঙ্গলপুর, রাণীরবাজার, কালারায়বিল, ভানুগাছ, বালিগাঁও, ইসলামপুর, তিলকপুর, ঘোড়ামারা, কোনাগাঁও, ছনগাঁও, তেতইগাঁও, হকতিয়ার খোলা, জালালপুর, কেওয়ালীঘাট, ভানুবিল, বন্দেরগাঁও, কান্দিগাঁও, ছয়চিরী, ভান্ডারীগাঁও, গঙ্গানগর, মকাবিল, গুলেরহাওর, টিলাগাঁও, মাঝেরগাঁও, নয়াপত্তন, হীরামতি গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রামে ঈদকে সামনে  রেখে মণিপুরী তাঁতিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাদের তৈরি কাপড়গুলো হলো মণিপুরী শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, মণিপুরী চাদর ও ভ্যানিটি ব্যাগসহ বিভিন্ন ডিজাইনের তৈরি তাঁতসামগ্রী। সব মিলিয়ে ঈদে তাদের তৈরি তাঁতসামগ্রীর কদর বাড়ছে। তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের শৈল্পিক ও নান্দনিক ডিজাইন আজ দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপ ও আমেরিকাতে স্থান করে নিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ট্রেড ফেয়ারে মণিপুরীরা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাছাড়া কমলগঞ্জে প্রতিদিন শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক বেড়াতে আসেন। তারা এখান থেকে মণিপুরী তাঁতের তৈরি বিভিন্ন পোশাক ক্রয় করে থাকেন। পর্যটকদের কাছে প্রথম পছন্দ হিসেবে থাকে এই মণিপুরী পোশাক। মণিপুরী তাঁতশিল্পী অনামিকা সিনহা বলেন, ঈদ ও পূজা উপলক্ষে অনেক পাইকার এসে অর্ডার দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক পাইকার এরই মধ্যে এসেছেন। সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত সুতা না পাওয়ার কারণে সব ক্রেতার চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। মণিপুরী তাঁত কাপড়ের কাঁচামাল সিলেটে না পাওয়ায় ঢাকা, নরসিংদী কিংবা চট্টগ্রাম থেকে আনতে হয়। কাপড় ব্যবসায়ী আনন্দ মোহন সিংহ বলেন, ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী তাঁতের কাপড় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কমলগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মণিপুরী তাঁতশিল্প প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র। বাংলাদেশ ব্যাংক চালু করেছে এসএমই ঋণ প্রকল্প। এসব কেন্দ্র থেকে প্রায় সব মণিপুরী পরিবার থেকেই নারীরা তাঁতের কাপড় তৈরি শিখে নিয়েছেন। তার মতে, শুধু প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাঁত ঋণ দিলেই চলবে না,  সর্বাগ্রে প্রয়োজন মণিপুরী কাপড়ের কাঁচামাল সহজলভ্য করা। মণিপুরী হ্যান্ডিক্রাফটসের স্বত্বাধিকারী এন প্রদীপ কুমার সিংহ জানান, এই শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রসার ও তাঁতিদের রক্ষার জন্য সুদের হার কমিয়ে প্রকৃত তাঁতিদের আরও বেশি করে ঋণ দিতে হবে। অন্য তাঁতশিল্পীরা জানান, দেশ-বিদেশে বাহারি মণিপুরী পোশাকের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। তাই সবার আগে কাঁচামাল প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর