শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সংসদে বাজেট পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ থেকে শুরু হওয়া নতুন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার এ বাজেট কণ্ঠভোটে পাস করা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্র্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সরকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৫তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেওয়া দশম বাজেট। উল্লেখ্য, ২ জুন জাতীয় সংসদে নতুন এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল অধিবেশনের শুরুতেই জানান, ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির মধ্যে সাতটির ওপর আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এরপর এসব দাবির ওপর আলোচনায় অংশ নেন সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা। দাবিগুলো হচ্ছে ৮, ১০, ২১, ২৩, ৩১, ৩৩ ও ৪৪ নম্বর। পরে অবশ্য ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া অধিবেশন পরিচালনা করেন। এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বেলা দেড়টায় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে নতুন অর্থবছরের ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস হয়। নতুন অর্থবছরের বাজেট থেকে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় হবে এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত প্রকল্প ব্যয় ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে এক হাজার ৮২৬ কোটি এবং রাজস্ব বাজেট থেকে অর্থায়নকৃত উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ৩৫৪ কোটি টাকা। তবে মূল উন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকার সঙ্গে নতুন অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনগুলোর উন্নয়ন ব্যয় ৯ হাজার ৬৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা যোগ করলে নতুন অর্থবছরে সর্বমোট উন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৩ হাজার ৩৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে এডিপিতে পাঁচ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৮ টাকার কর্মসূচি রয়েছে।

নির্দিষ্টকরণ বিল পাস : নতুন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে গতকাল পাস করা হয়েছে। এর মধ্যে সংসদ সদস্যদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ ১১ হাজার ৪১০ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৩ কোটি ৮৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাইকোর্টের বিচারপতি এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতন ইত্যাদি দায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উল্লেখ্য, মোট বাজেট ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক অনুদান রয়েছে। সেই অনুদান বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নির্দিষ্টকরণ অর্থ মঞ্জুরের জন্য সংসদে পাস করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিল উপস্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা পাস করা হয়। এ সময় সরকারদলীয় সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে বাহ্বা জানান।

মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব : নতুন বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের ৪২০টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আলোচনা সত্ত্বেও ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

খাতওয়ারি বরাদ্দ : ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদ খাতে ২৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকা, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে ১৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক হাজার ৩২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনধিক ৯৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে ৯২৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৭৭ কোটি ২২ লাখ টাকা, অর্থ বিভাগে ৪৭ হাজার ৫৬৪ কোটি ৬৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ২ হাজার ৩০১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ২ হাজার ৫২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ খাতে ২৪৫ কোটি ৬২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, পরিকল্পনা বিভাগে ১ হাজার ৪১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ খাতে ১৬১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৫০০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খাতে ৫৫২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক হাজার ৮৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ২২ হাজার ১১৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার টাকা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ২৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা, আইন ও বিচার বিভাগে এক হাজার ৫২১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খাতে হয়েছে ১৯ হাজার ২৮৫ কোটি ৯৩ লাখ ২২ হাজার টাকা, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে ২৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ২২ হাজার ১৬২ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ২৬ হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে ২ হাজার ৬৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে ১৭ হাজার ৫১৬ কোটি ৫ লাখ টাকা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে এক হাজার ৮৩৫ কোটি ৮ লাখ টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৪ হাজার ২৭৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ১৫১ কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় খাতে ৩০৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় খাতে ৩ হাজার ১২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা, তথ্য মন্ত্রণালয় খাতে ৮৩৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫২৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় খাতে ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগে ২১ হাজার ৩২৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ১ হাজার ৩৭৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৭১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৬৮৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ১ হাজার ৯৭৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয় খাতে ১৩ হাজার ৬৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৮০২ কোটি ১৪ লাখ টাকা, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৪৯১ কোটি ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে ৪ হাজার ৭১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয় খাতে ১২ হাজার ৯২ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ খাতে ১০ হাজার ৯১০ কোটি ৯১ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় খাতে ১১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় খাতে ২ হাজার ৫৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় খাতে ৫৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় খাতে ২ হাজার ৫১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ৮৩৯ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ খাতে ১৩ হাজার ৬২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, সুপ্রিমকোর্ট খাতে ১৫৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ৩ হাজার ১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় খাতে ৫৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, দুর্নীতি দমন কমিশন খাতে ১২ কোটি টাকা এবং সেতু বিভাগ খাতে ৯ হাজার ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর