শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

নৌকায় সিল মারার প্রমাণ, দুই ইউপিতে ফের ভোট

গোলাম রাব্বানী

ভোট জালিয়াতির ভয়াবহ প্রমাণ মেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দুই ইউনিয়নের ফলাফল বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ও আখাউড়া (দ.) ইউপির চেয়ারম্যান পদে ফের ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। ইসি সূত্র জানিয়েছে, ভোট জালিয়াতির কারণে এই দুই ইউপির ১৮ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সাতটিতে ধানের শীষ- লাঙ্গলসহ অন্যান্য প্রতীকে শূন্য ভোট পড়েছে। তিন কেন্দ্রে ৯৫ ও ছয় কেন্দ্রে ৮৫ ভাগের বেশি ভোট কাস্ট হওয়ার প্রমাণও মিলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, হাতে গোনা দু-একটি ইউপির ফলাফল বাতিল করে ভোট জালিয়াতির দুর্নাম ঘোচাতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। ভোট জালিয়াতির হাজার হাজার অভিযোগ থাকলেও ইসি সবগুলো কেন আমলে নিচ্ছে না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে দুই ইউপির ভোট বাতিল হলে অন্য সব অভিযোগের কী হবে এ নিয়ে খোদ ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, পরাজিত প্রার্থী প্রভাবশালী হওয়ায় এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি।

জানা গেছে, ইসির উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ ফলাফল বাতিল করে পুনঃ ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ও আখাউড়া (দ.) ইউপির চেয়ারম্যান পদে ফলাফল বাতিল করে ওই দুই ইউপির সব কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদে পুনরায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। ভোটের তারিখ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, এ দুই ইউপিতে ভোট জালিয়াতি তথা নৌকা প্রতীকে সিল মেরে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে আখাউড়া (দ.) ইউপিতে মোট ৯ কেন্দ্রের মধ্যে নূরপুর ক্যাপ্টেন মাহবুব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিচতলা কেন্দ্রে ৭৮৩ ভোট কাস্ট হয়েছে। এর মধ্যে ধানের শীষ ও লাঙ্গল প্রতীকে শূন্য ভোট পড়েছে। এককভাবে নৌকা প্রতীকে পড়েছে সব অর্থাৎ ৭৮৩ ভোট। এ ছাড়া তিন কেন্দ্রে ৮৫ ভাগের বেশি ভোট কাস্ট হয়েছে। এই ইউপিতে সব কেন্দ্র মিলে ধানের শীষের প্রার্থী শাহ নোয়াজ খান পেয়েছেন ৪৪০ ভোট, লাঙ্গলের মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া পেয়েছেন ৯৭ ভোট আর নৌকার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৫ ভোট। এ ইউপিতে বেসরকারিভাবে নৌকাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। পরে প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইসি তদন্ত করে ভোট জালিয়াতির প্রমাণ পায়। এ জন্য ভোটের ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। এদিকে মনিয়ন্দ ইউপিতেও ভোট জালিয়াতির ভয়াবহ চিত্র মিলেছে। ৯ কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতে ৯৫ ভাগ ভোট গ্রহণ হয়েছে। তিন কেন্দ্রে ৮৫ ভাগের বেশি ভোট গ্রহণের তথ্য পাওয়া গেছে। এই ইউপিতে ঘোড়া ও টেলিফোন প্রতীকের প্রার্থী ছয় কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া হরিপুর ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৬.৩ ভাগ। এর মধ্যে আনারস পেয়েছে ১২৩, ঘোড়া শূন্য, টেলিফোন ৪, ধানের শীষ ১৬৩ ও নৌকা পেয়েছে ১ হাজার ২২ ভোট। টান মান্দাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিচতলা কেন্দ্রে ৯৪.২২ ভাগ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে আনারস পেয়েছে ৩৯, ঘোড়া-টেলিফোন শূন্য, ধানের শীষ ২৩ ও নৌকা পেয়েছে ৮৬০ ভোট।

সর্বশেষ খবর