শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

তবু মৌচাক মার্কেট

মোস্তফা মতিহার

তবু মৌচাক মার্কেট

নানা টানাপড়েনের মধ্যেও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে রাজধানীর মৌচাক মার্কেট। একদিকে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ, পাশাপাশি রাস্তাঘাটের করুণ দশা। এর ওপর আইনি টানাপড়েনে দুর্বিপাকে মৌচাক মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তবু ক্রেতার উপস্থিতির কমতি নেই। পুরোদমেই চলছে ঈদের কেনাকাটা।

গতকাল বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বরাবরের মতো মৌচাক মার্কেট তার মধ্যবিত্ত ইমেজ ঠিকই ধরে রেখেছে। পণ্য পসরায় ঘাটতি নেই। তরুণীদের সালোয়ার-কামিজ ও থ্রি-পিসের পাশাপাশি রয়েছে আকর্ষণীয় সব ধরনের দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের শাড়ি। রয়েছে লেহেঙ্গা, স্টিচ ও আনস্টিচ থ্রি-পিস, শাড়ি। পাশাপাশি রয়েছে তরুণদের শার্ট, প্যান্ট, জুতা, মোজা, গেঞ্জি, আন্ডারওয়ার। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গেঞ্জি সেট ও ইন্ডিয়ান সেট। এ ছাড়া এই মার্কেটে রয়েছে অলঙ্কার থেকে শুরু করে কসমেটিকস ও বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি জিনিসপত্র। অর্থাৎ মৌচাকের একই অঙ্গে বহুরূপ রয়েই গেছে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে মৌচাক যৌবন হারালেও ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ঐতিহ্য ঠিকই ধরে রেখেছে।

শুধু ‘একই অঙ্গে অনেক রূপ’ নয়, দামের ক্ষেত্রেও মৌচাক রাজধানীর অন্য সব মার্কেট থেকে রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী এই মার্কেটে নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা দামের থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে রয়েছে ৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামের শাড়ি। মার্কেটটির নিচতলার আনোয়ারা গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী রনি হাসান জানান, তাদের দোকানে বাচ্চাদের ড্রেস থেকে শুরু করে তরুণীদের সব ধরনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। সুরঞ্জনা গার্মেন্টসে রয়েছে অপেক্ষাকৃত কম দামে আকর্ষণীয় সব পোশাক। এ দোকানের বিক্রয়কর্মী মনির হোসেন জানান, ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় তারা জর্জেট থ্রি-পিস বিক্রি করছেন। মেয়েশিশুদের ড্রেস রয়েছে ১০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। আর ছেলেশিশুদের পোশাক ১৫০ থেকে ৬৫০ টাকা। এ ছাড়া এ মার্কেটের কোয়ালিটি ফ্যাশনে মনকাড়া ডিজাইন ও বাহারি রঙের আকর্ষণীয় থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ৬০০, ৭০০, ৮৫০ ও ৯৫০ টাকার মধ্যে। চৌধুরী ট্রেডার্সে তরুণীদের পছন্দের ইন্ডিয়ান ফুলকলি থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার টাকায়, কটি ড্রেস রয়েছে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায়, দেশি লোন রয়েছে ৫৫০ টাকায়, কম্পিউটার কাজের থ্রি-পিস রয়েছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। দাম কম হলেও মান কিন্তু মোটেই অনুন্নত নয়।

অভিজাত দোকান লেডিস কর্নারে রয়েছে তরুণীদের জন্য আকর্ষণীয় ডিজাইন ও বাহারি রঙের বিভিন্ন ধরনের ড্রেস। এই দোকানের কর্মী শাকিল জানান, সিল্কিনি, প্রাচী, বিনয় কাশিশ, সুতি, বুটিকস ও পাকিস্তানি লোনের থ্রি-পিস রয়েছে তাদের এবারের ঈদ কালেকশনে। অভিজাত বাদল’স শাড়ির দোকানে রয়েছে বেনারসি, কাতান, লেহেঙ্গা শাড়ি, বজরঙ্গি ভাইজান, কিরণমালা, কাঞ্জিবরণ, অপেরা কাতান, রাজগুরু কাতান, কাবেরী পার্টিসহ নানা ধরনের আকর্ষণীয় শাড়ি। ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠেনি কিংবা বিক্রি হচ্ছে না এ বিষয়টি একেবারেই মানতে নারাজ বাদল’স শাড়ির স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, দুপুরের পর থেকে প্রতিদিনই ক্রেতাদের যথেষ্ট ভিড় হচ্ছে, আর তাদের বিক্রিও আশাব্যঞ্জক।

রেইনবো শাড়ি’তে গ্রামবাংলার টাটকা তাঁতশাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৭৫০ টাকায়, ভাবিয়া শাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, জামদানি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, কাটিং জামদানি ১ হাজার ২০০ টাকায়, চোষা কাতান ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, বুটিকসের বিভিন্ন ধরনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৯৭৫ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকার মধ্যে। এখানে নানা রঙের প্রিন্ট শাড়ি রয়েছে ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। থ্রি-পিস ও শাড়ির পাশাপাশি এ মার্কেটে তরুণদের শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। লুঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। এ ছাড়া সৌন্দর্যপ্রিয় তরুণীদের রূপচর্চায় এ মার্কেটে রয়েছে অন্য মার্কেটের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে আকর্ষণীয় সব কসমেটিকস আইটেম। কথা প্রসঙ্গে মার্কেটের মদিনা কসমেটিকসের বিক্রয়কর্মী রাসেল জানান, সৌন্দর্যপ্রিয় ও ফ্যাশন-সচেতন তরুণীদের জন্য তাদের দোকানে সব ধরনের কসমেটিকস আইটেম রয়েছে। অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় কম দামে কম লাভে তারা এসব কসমেটিকস আইটেম বিক্রি করছেন বলেও জানান রাসেল।

মদিনা কসমেটিকসের এই বিক্রয় কর্মী জানান, তারা আই লাইনার বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, মাশকারা ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়, লিপ লাইনার রয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়, লিপ গ্লোজ পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকায়,  ফেসওয়াশ বিক্রি করছেন ১২০ টাকায়, প্যানকেক ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, আইল্যাশ রয়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে, প্যানস্টিক ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, আই শ্যাডো ৫০ থেকে ১০০ টাকায়, সিটি গোল্ডের আংটি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়, গোল্ড প্লেটের আংটি রয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে এবং গোল্ড প্লেটের ব্রেসলেট পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। রাজস্থানি টিকলির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, ঝাপটা পাওয়া যাচ্ছে ২৩০ টাকায়, অ্যান্টিক কানের দুল ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে, পাঞ্চক্লিপ ২০ টাকা, চোখের পাপড়ি ২০ টাকা, অ্যান্টিক গলার সেট ৪৫০ টাকা, কোমরের বিছা ২৫০ টাকা, স্কার্পের ব্রুশ ২০ থেকে ১০০ টাকা, পপ ১৫ থেকে ৩০ টাকা, কাজল ৫০ থেকে ১৫০ টাকা, ক্লোসল কাজল ৫০ টাকা, বেবি পাঞ্চক্লিপ ২০ টাকা, পাম্পিং ক্লিপ ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং আই শ্যাডো ব্রাশ পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সীর পোশাকের পাশাপাশি কসমেটিকস কালেকশনেও এগিয়ে রয়েছে এই মার্কেট। তাই বলাই যায়, একই অঙ্গে বহু রূপ ধারণ করে আছে ঐতিহ্যবাহী মৌচাক মার্কেট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর