সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

হলি আর্টিজান এখন...

আলী আজম

হলি আর্টিজান এখন...

গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রাস্তার শেষ প্রান্তে লেকের পাশে হলি আর্টিজান বেকারি তিন দিন আগেও ছিল প্রাণোচ্ছ্বল মানুষের আনাগোনায় সরব। গুলশান এলাকার বিদেশিদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ওই ক্যাফে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেও ছিল পছন্দের। জঙ্গি হামলা ও পরে কমান্ডো অপারেশন থান্ডার বোল্টে প্রায় বিধ্বস্ত হলি বেকারি এখন যেন এক মৃত্যুপুরী। রেস্তোরাঁর সামনে কেবল কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পাহারায় দেখা যায়। আশপাশের বাসিন্দারা এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। অতি শান্ত পরিবেশেও যেন শান্তির অভাব। উদ্বেগের ঘোর আর নিরাপত্তার কড়াকড়িতে এখনো হয়তো নিরাপদ বোধ করতে পারছেন না তারা।

স্থানীয়রা জানান, ওভেন থেকে বের করা গরম রুটি আর বেকারির খাবারের জন্য সকালেই সেখানে হাজির হতেন অনেক বিদেশি নাগরিক। বিকালে সবুজ লনে চলত আড্ডা। পোষা প্রাণীদের প্রবেশাধিকার থাকায় অনেকেই শখের প্রাণীটিকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। সবুজ মাঠে খেলত শিশুরাও,  সেখানে এখন ছড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ আর সাঁজোয়া যানের চাকার দাগ। বেকারির বাইরের অংশে লেক ভিউ ক্লিনিকের পার্কিংয়ে এখনো রাখা পাঁচটি গাড়ি। এর একটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে অভিযানের সময় সাঁজোয়া যানের চাকার নিচে পড়ে। বাকি গাড়ির মালিকের খবর নেই, ঘটনার পর থেকে সেগুলো পড়ে আছে। পার্কিং এলাকার লোহার ফটক বন্ধ করে ভিতরে-বাইরে পাহারায় পুলিশ। লেকের ওয়াকওয়েতেও পুলিশের পায়চারি। ৭৯ নম্বর রোডের অবরুদ্ধ অংশটুকুতে আছে ২০ কাঠার ১০টি প্লট। এর মধ্যে সাতটিতে রয়েছে বহুতল ভবন, একটিতে নতুন ভবন ওঠার অপেক্ষা। বাকি দুটি প্লটের একটিতে লেকের পারে দারুণ লোকেশনে হলি আর্টিজান বেকারি, আর বিপরীত দিকের অন্য প্লটে লেক ভিউ ক্লিনিক। শুক্রবার রাত আর শনিবার দুপুর পর্যন্ত আতঙ্কে থাকা এলাকাবাসী গতকাল একটু হাফ ছাড়তে পারলেও দুঃসহ ১২টি ঘণ্টা তাদের তাড়িয়ে ফিরছে। বারান্দা থেকে বাইরে তাকালেই চোখে পড়ছে ধ্বংসস্তূপ। অভিযানের পর বিপদ কেটে গেলেও অনেকেই আর শনিবার ঘর থেকে বের হননি। গতকাল নানা প্রয়োজনে আবার তাদের বের হতে হয়েছে। কিন্তু রাস্তার মাথায় পুলিশ ব্যারিকেডে পড়তে হচ্ছে নানা প্রশ্নের মুখে। ৭৯ নম্বর রোড যেখানে ৭৫ নম্বর রোডে মিলেছে, সেখানে রয়েছে একটি ব্যারিকেড। সতর্ক পাহারায় পুলিশ সদস্যরা। আছেন নারী পুলিশও। কয়েক দফা প্রশ্ন ও শরীর তল্লাশির পর ভিতর থেকে ব্যারিকেড পার হয়ে বাইরে যাওয়া সম্ভব। তবে উল্টো পথে ব্যারিকেড পার হয়ে ভিতরে আসা আরও কঠিন। এলাকার বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কেবল ঢুকতে পারছেন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিয়ে। আর যারা আসতে চাইছেন, তাদের পরিচিত কাউকে বাসা থেকে গিয়ে পরিচয় দিয়ে এগিয়ে আনতে হচ্ছে। ক্যাফে-রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে হলি আর্টিজান বেকারিতে বিদেশিদের আনাগোনা ছিল বেশি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পুরো প্রাঙ্গণ ভরা থাকত। সবুজ লনে চাদর বিছিয়ে রোদও পোহাতেন অনেকে, ঢাকায় যে দৃশ্য প্রায় বিরল। কিন্তু আগে কখনো নিরাপত্তার এত কড়াকড়ি চোখে পড়েনি বলে স্থানীয়রা জানালেন। তারা বলছেন, গুলশান ২ নম্বর মোড় থেকে সতর্ক পাহারায় থাকা বিভিন্ন দূতাবাসের পাশ দিয়েই আসতে হতো বলে ৭৯ নম্বর রোডের নিরাপত্তায় হয়তো ফাঁক থেকে গিয়েছিল। সরেজমিন দেখা গেছে, পুলিশ ভবনটিকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। সামনের রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট এবং বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের দুটি দল প্রবেশ করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত ছিলেন। তারা হলি আর্টিজানের সামনে গিয়ে কিছু সময় অবস্থান নেন। সকালে ইতালি ও জাপানি দূতাবাসে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। দুই দূতাবাস থেকে বের হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইতালি ও জাপানি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও সমবেদনা জানিয়েছেন। সকাল থেকেই বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলের সামনে ভিড় করতে থাকেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর