সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ফেসবুকে নিন্দার ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় বইছে। এ ঘটনার নিন্দা ও শোক জানাচ্ছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। জঙ্গি হামলার পর সেখানে সেনা কমান্ডোদের অভিযান ও পাঁচটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুকে অনেকেই কাভার ফটো কালো করে শোক পালন করছেন। এ ছাড়া ফেসবুকে হ্যাসট্যাগ হিসেবে ‘প্রে ফর ঢাকা’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ প্রভৃৃতি অনেকেই ব্যবহার করেন। নৃশংস এ ঘটনার সমবেদনা জানিয়ে অনেকেই নানা মতামতও দিচ্ছেন ফেসবুকে। শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের এই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। শোক পালনে অনেকেই বেছে নিয়েছেন ফেসবুককে। তারা প্রোফাইল ও কাভার ছবি হিসেবে কালো ব্যাজ ব্যবহার করছেন। কেউবা স্ট্যাটাস বা নোট লিখে শোকের কথা প্রকাশ করছেন। ফেসবুকে অনেকেই জঙ্গিদের বর্বরতার শিকার হওয়া ফারাজ আইয়াজ হোসেন, অবিন্তা কবির, তারুশি জৈন ও ইশরাত আকন্দের ছবি শেয়ার করে তাদের শোকের কথা লিখছেন। এ ছাড়া ওই নৃশংস ঘটনার বিরুদ্ধে ফেসবুকে সোচ্চার অনেকেই। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই জঙ্গি হামলার পর থেকেই মানুষ ফেসবুকে নানাভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। ফেসবুক হয়ে ওঠে খবরের উৎস। রাত দেড়টার দিকে আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এক টুইট বার্তায় জানায়, আইএস দাবি করেছে, তারা ঢাকার রেস্তোরাঁয় আক্রমণ করে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছে। এরপর আমাক নিউজ ওই রেস্তোরাঁর ভিতর থেকে রক্তাক্ত আট-নয়জনের ছবিও প্রকাশ করে। এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে। শনিবার রাতে গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী উল্লেখ করে পাঁচ তরুণের ছবি প্রকাশ করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এই ছবিগুলো ভাইরাল হয়। ওই ছবিগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে অনেকেই জঙ্গিদের পরিচয় বের করেছেন বলে ফেসবুকে ছড়াচ্ছে। রাত ১০টা ৫১ মিনিটে পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির নাম প্রকাশ করা হয়। তারা হলেন— আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। এ ছাড়া ফেসবুকে ওই রেস্তোরাঁর কাছাকাছি একটি ভবন থেকে একজন বিদেশির কিছু আপলোড করা ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। একেকটি ভিডিও দেখা হয়েছে লাখো বার। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ভোরবেলায় চারজন নারী, তিনজন পুরুষ ও একটি শিশু রেস্তোরাঁর সামনের চত্বর দিয়ে হেঁটে বের হয়ে যাচ্ছেন। এদের ছেড়ে দেওয়ার পর ছাই রঙের গেঞ্জি পরিহিত পিস্তল হাতে একজনকে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে দেখা যায়। ভিতরে একটি টেবিলের পাশে দুজন বসে আছেন। দুটি ক্লিপে কমান্ডো অভিযানের কিছু দৃশ্য আছে। তাতে দেখা যায়, দুটি সাঁজোয়া যান সজোরে রেস্তোরাঁর নিচতলার দেয়ালে আঘাত করে তা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। আরেক ক্লিপে পাঁচজন সেনাসদস্য ভবনের ভিতরে বোমাজাতীয় কিছু একটা ছুড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সারিবদ্ধ অবস্থানে থেকে অস্ত্র নিয়ে ভিতরে ঢোকেন। এ সময় অনেক গুলির শব্দও শোনা যাচ্ছিল। ডি কে হোয়াং নামের এক দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক তার ফেসবুক পৃষ্ঠায় এই পাঁচটি ভিডিও পোস্ট করেন শনিবার সকাল ৭টা ২৬ থেকে ৮টা ১৮ মিনিটের মধ্যে। সবগুলো ভিডিওই কয়েক হাজার বার করে শেয়ার হয়। ফেসবুকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডি কে হোয়াং দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে।

গুলশানে ঘটনাস্থলের পাশে একটি বাড়ির জানালা থেকে তোলা ওই পাঁচটি ভিডিওর সঙ্গে সময় ও সামান্য বর্ণনা দেওয়া হয় কোরীয় ভাষায়, যার ইংরেজি অনুবাদ দেখা যাচ্ছিল ফেসবুকে। গতকাল দুপুরে তার ফেসবুক পাতায় আর ভিডিওগুলো দেখা না গেলেও ইউটিউবে একই ভিডিও শেয়ার করেন কয়েকজন। সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান হলি বেকারিতে ঢোকার আগের একটি ভিডিও হোয়াং ফেসবুকে দিয়েছেন ৭টা ৪৬ মিনিটে। সেখানে নারী ও শিশুসহ কয়েকজনকে ক্যাফে থেকে বের করে দিতে দেখা যায়। ওই সময়ই পাঁচজনকে উদ্ধারের খবর জানিয়েছিলেন একজন র‌্যাব কর্মকর্তা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর