সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
সফল মানুষ

কাগজের আসবাবপত্রে নাজনীনের চমকগাথা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

কাগজের আসবাবপত্রে নাজনীনের চমকগাথা

কাগজ দিয়ে যে আসবাবপত্র বানানো যায় এবং সেই আসবাবপত্রে চমক সৃষ্টি করা যায়— তা প্রমাণ করেছেন মহাদেবপুরের গৃহবধূ নাজনীন নাহার। তিনি কাগজ দিয়ে সোফাসেট, টি-টেবিল, টুল, চেয়ার, ফুলদানি, মোড়া, আলনা, পিঁড়ি— এমন কি রুটি তৈরির পিঁড়িও তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

মহাদেবপুর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের নওহাটা মোড়ের সামান্য দক্ষিণে খোর্দ্দনারায়ণপুর গ্রামের আবদুল লতিফের মেয়ে নাজনীন নাহার। বিবাহিত জীবন হলেও তিনি স্বামী-সন্তানসহ থাকেন পিতার বাড়িতে। কাগজ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরিতে নাজনীনের দারুণ কৌতূহল ছিল। সেই কৌতূহল থেকেই তার শখ পূরণ। প্রায় বছর চারেক আগে বগুড়া থেকে তার খালা ফেন্সী বেড়াতে এসেছিলেন। তার কাছ থেকে কাগজ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরির গল্প শুনেছিলেন। তারপর থেকে তিনি নিজেই সে কাজ শুরু করেন। এ কাজে তিনি খাতার কাগজ, পুরাতন সংবাদপত্র এবং পুরাতন কার্টন ব্যবহার করেন। নাজনীনের বর্ণনা অনুযায়ী, রাতের বেলা কাগজ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরদিন সকালে ভিজানো কাগজ দিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। এসব মণ্ডের বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়। সংসারের প্রাত্যহিক কাজ কর্ম, সন্তানদের দেখাশোনা ইত্যাদি কাজের ফাঁকে ফাঁকে নাজনীন মণ্ড দিয়ে নিজের পরিকল্পনামতো সোফাসেট, টেবিল, টি-টেবিল, চেয়ার, ফুলদানী, মোড়া, আলনা, পিঁড়ি ইত্যাদি তৈরি করেন। পরে এগুলোতে বিভিন্ন রং করে ঘর সাজান। তিনি জানান, তার বাড়িতে কাঠের বা স্টিলের কোনো আসবাবপত্র নেই। সবই কাগজের তৈরি। এগুলো তৈরিতে তিনি কোনো ফ্রেম ব্যবহার করেন না। হাতের আন্দাজে কাজ করেন। দেখা গেছে, তার এসব আসবাবপত্র এতটাই নিখুঁত এবং দৃষ্টিনন্দন— যা কল্পনাই করা যায় না। এসবের উপর অসাধারণ কারুকাজ করা হয়েছে। নাজনীন নাহার জানান, বর্ষার সময় বা বৃষ্টি হলে এসব তৈরি করা যায় না। কেবলমাত্র প্রচণ্ড রোদের সময় তৈরি করতে হয়। এগুলো তৈরির পর কড়া রোদে শুকাতে হয়। ভালো করে না শুকালে তেমন শক্ত হয় না। একবার তৈরি করে রোদে শুকালে কাঠের আসবাবপত্রের মতোই এগুলো শক্ত ও মজবুত হয়। স্টিল, লোহা বা কাঠের সামগ্রীতে মরিচা বা ঘুণপোকা আক্রমণ করতে পারে; কিন্তু ভালো করে শুকানো কাগজের তৈরি আসবাবপত্রে কোনো ঘুণ বা মরিচা ধরে না। তিনি জানান, শৌখিনভাবে ঘর সাজানোর এসব আসবাবপত্রের চাহিদা থাকলেও তিনি এখনো বাণিজ্যিকভাবে এর বাজারজাত করেননি। এখনো পারিবারিকভাবে ব্যবহারের মধ্যেই সবকিছু সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তবে তিনি বলেন, বাজারজাত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে এসব আসবাবপত্রের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তিনি ব্যবসায়িকভাবে এসব তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করেন। গ্রামবাসীর অনেকে জানান, নাজনীনের এই মেধা দেখে এলাকার মানুষ হতবাক। এসব আসবাবপত্রের প্রতি এলাকাবাসীর খুবই কদর। তিনি নিজে এসব তৈরি করে থেমে নেই, প্রতিবেশী অনেক মহিলাকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ওই মহিলারাও পারিবারিকভাবে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করছেন। কাগজের তৈরি এসব সামগ্রীর বেশ কদর রয়েছে। তবে বাজার সৃষ্টিতে প্রশাসনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর