মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এক মাসেও পাওয়া যায়নি ক্লু নির্দেশদাতার নামও অজানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

এক মাসেও পাওয়া যায়নি ক্লু নির্দেশদাতার নামও অজানা

এক মাস পরও অজানা থেকে গেল এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের কারণ এবং মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতার নাম। গ্রেফতার করা যায়নি কিলিং মিশনের জন্য খুনি ভাড়া করা কামরুল ইসলাম ওরফে আবু মুছা সিকদারসহ মিশনে অংশ নেওয়া চার খুনিকে। যদিও পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ থাকা আসামিদের পরিবারের দাবি, পনের দিন আগেই তাদের আটক করেছে পুলিশ। এখন কোনো একটি পক্ষকে রক্ষা করতে তাদের গুম করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তবে পুলিশ তাদের এ দাবি অস্বীকার করছে। মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘কী কারণে মিতু খুন হয়েছেন তা জানা যায়নি। কে বা কোন গোষ্ঠী নেপথ্যে থেকে মিতুকে খুন করার নির্দেশ দিয়েছে তা জানতে পারিনি। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে কাজ করছে পুলিশ।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত মামলার যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয়। যতটুকু জানানো হয়েছে, এর চেয়ে বেশি অগ্রগতি নেই।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির    এক কর্মকর্তা বলেন, নিহত মিতু স্বামী বাবুল আক্তারের পেশাগত কারণে খুন হননি, এটা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। খুনের অভিযাগে গ্রেফতার হওয়া আনোয়ার হোসেন, ওয়াসিম ওরফে মোতালেব, শাহজাহান এবং এহতেশাম হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এ খুনের বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আনোয়ার ও ওয়াসিম পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য দিয়েছে তার সামান্যও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেনি। তবে তাদের খুনের জন্য মুছাই ভাড়া করেছে বলে উল্লেখ করেছেন। অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলা এবং ‘পলাতক’ আবু মুছা সিকদার এসপি বাবুল আক্তারের ‘ঘনিষ্ঠ সোর্স’ হিসেবে পরিচিত। বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠরা কেন মিতুকে হত্যার নির্দেশ এবং হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করেছে এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। পুলিশের দাবি— মুছা, আবদুল নবী, রাশেদ এবং কালু পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাদের আটক করেছে পুলিশ। যদিও সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘মুছা, নবী, রাশেদসহ যারা পলাতক রয়েছে তাদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’ সিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিতু খুনের কারণ ও নেপথ্যে থাকা নির্দেশদাতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। মিতু খুনের কারণ ও নির্দেশদাতার নাম প্রকাশিত হলে ‘থলের বিড়াল’ বের হয়ে আসবে। তাই কৌশল হিসেবে খুনের কারণ ও নির্দেশদাতার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।’ 

মুছার স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন : মিতু খুনের কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীদের ভাড়া করা মুছা সিকদারকে ‘জীবিত’  আদালতে হাজির করার দাবি করেছেন তার স্ত্রী পান্না আকতার।  সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পান্না বলেন, ‘মুছা দোষী হলে শাস্তি পাবে। তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হোক। কিন্তু এখন শুনছি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এখন আমার স্বামীকে জীবিত ফেরত চাই। মুছা নাকি খুনের নির্দেশদাতা?  মুছা কেন খুন করতে যাবে? তার কী স্বার্থ? মুছাকে আদালতে হাজির করা  হোক। তারপর সবকিছু পরিষ্কার হবে।’ তিনি বলেন, ‘বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম এবং পরিদর্শক নেজাম উদ্দিন ২২ জুন সকালে আমাকে, মুছা, দুই  ছেলে এবং মুছার বড় ভাই সাইদুল ইসলাম সিকদারকে আটক করে। পরে  পুলিশ সবাইকে বন্দর এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে আটকে রাখে। বেলা ১১টার দিকে মুছা ও তার ভাইকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়।’ ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বাবুল আক্তার বাসায় অতিথি হয়ে এসেছিলেন কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘরোয়াভাবে জন্মদিন করেছি। অনেক আত্মীয়স্বজনকেও বলিনি।  প্রশাসনের কাউকে বলিনি। ’ প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।

সর্বশেষ খবর