মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

কীর্তনখোলায় লঞ্চ স্টিমার মুখোমুখি নিহত ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

কীর্তনখোলায় লঞ্চ স্টিমার মুখোমুখি নিহত ৫

কীর্তনখোলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী স্টিমার পিএস মাসুদের ওপর উঠে যায় সুরভী-৭ লঞ্চ। এতে দুমড়ে মুচড়ে যায় স্টিমারের একাংশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া পয়েন্টে বিআইডব্লিউটিসির মোড়লগঞ্জগামী স্টিমার পিএস মাসুদ ও ঢাকাগামী এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্টিমারের পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫ জন। তাদের উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ভোর ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযান শেষে ক্ষতিগ্রস্ত স্টিমারটি বরিশাল নদীবন্দরে এনে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে দুর্ঘটনাকবলিত স্টিমারের যাত্রীদের বিআইডব্লিউটিসির অপর জাহাজ এমভি মধুমতির মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের রুট পারমিট সাময়িক স্থগিত করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিসি জানায়, ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে ছয় শতাধিক যাত্রী নিয়ে পিএস মাসুদ বরিশাল হয়ে মোড়লগঞ্জ যাচ্ছিল। স্টিমারটি ভোর ৪টার দিকে কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া অতিক্রমকালে বরিশাল নদীবন্দরে যাত্রী নামিয়ে ফের ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া এমভি সুরভী-৭ সিগন্যাল উপেক্ষা করে পিএস মাসুদের ডান পাশে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে স্টিমারের একটি বিলাস কেবিন, চারটি ক্রু কেবিন ও প্যাডেলসহ (পাখা) অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। খবর পেয়ে ভোর ৫টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত স্টিমারে গিয়ে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের মোট সাতটি দল উদ্ধার তত্পরতা শুরু করে। তারা স্টিমার থেকে তিনজন নারী ও দুজন পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতরা ক্রু কেবিনের যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন ঝালকাঠীর মুক্তা, মোরেলগঞ্জের সীমা বেগম ও বরিশাল নগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের তামান্না আক্তার। অপর দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে মো. কালু, ফারজানা আক্তার, শাকিল সরদার, রুবেল ও নূরুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সকাল ৮টার দিকে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার পর দুর্ঘটনাকবলিত স্টিমারটি অপর একটি জাহাজের সহায়তায় বরিশাল নদীবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিআইডব্লিউটিসির অপর জাহাজ এমভি মধুমতির সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত স্টিমারের যাত্রীদের গন্তব্যে পাঠানো হয়। এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই সুরভী-৭ পালিয়ে যায়। এদিকে বরিশালের কীর্তনখোলা নদী লঞ্চ-স্টিমারের সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের রুট পারমিট সাময়িক স্থগিত করেছে বিআইডব্লিউটিএ। হতাহতদের দেখতে গতকাল বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজ্জাম্মেল হক রুট পারমিট স্থগিত করার সত্যতা নিশ্চিত করেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া বরিশাল জেলা প্রশাসন গঠন করেছে সাত সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম আজাদকে সভাপতি এর সভাপতি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিএমপি কমিশনার বা তার প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন বা তার প্রতিনিধি, নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বা তার প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী বা তার প্রতিনিধি এবং ফায়াস সার্ভিসের উপ-পরিচালক বা তার প্রতিনিধি। এ ছাড়া এ ঘটনায় মেরিন আদালতে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর আগে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলামের কার্যালয়ে সংসদ সদস্য, বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা ও লঞ্চ মালিকদের এক সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সুরভী লঞ্চের অন্যতম মালিক রিয়াজুল কবির রিয়াজ নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে সহায়তার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার ওই প্রস্তাবে কেউই সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সর্বশেষ খবর