বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
দক্ষিণাঞ্চলে সর্বোচ্চ সতর্কতা

যে কোনো সময় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি হামলার শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মনে ‘যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে হামলার’ ভয় জেঁকে বসেছে। জনমনে এমন আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৮ জুন মাদারীপুরে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার আগে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের সদস্য ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাদের পরবর্তী টার্গেট বরিশাল। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানোর জন্য নয় জঙ্গি বরিশালে এসেছে মর্মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর সবগুলো প্রবেশপথে চেকপোস্ট স্থাপন করে পুলিশ। বাড়ানো হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ের নিরাপত্তা। জনসাধারণ টের না পেলেও প্রশাসনের অভ্যন্তরে চলছে ‘রেড অ্যালার্ট’। ওই নয় জঙ্গির কাউকে আটক করা সম্ভব না হলেও উল্টো ভোলা ও বরগুনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়গুলোতে হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের মহাপ্রভুর মন্দিরে চিঠি পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মন্দির কমিটির সদস্য নীহার কুমার মজুমদার। তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্দিরের প্রণামী বাক্সে একটি হাতে লেখা চিঠি পাওয়া যায়। চিঠিতে বলা হয়, ‘সাবধান থেকে লাভ নেই। আপনাদের জবাই করে হত্যা করা হবে।’ এই মন্দিরে পূজা-অর্চনার কাজ করেন পুরোহিত জগদানন্দ ব্রহ্মচারী। ওই ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবির জানান, ওই মন্দিরে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভোলার আরও কয়েকটি মন্দিরে হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়ে একই ধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার কথা জানান তিনি।

এদিকে বরগুনা পৌর শহরের কড়ইতলা কালিবাড়ী এলাকায় রাধাগোবিন্দ মন্দিরে চিঠি দিয়ে ‘পুরোহিত হত্যা সংগঠন’ নামে কথিত একটি সংগঠন হত্যার হুমকি দিয়েছে। শনিবার সকালে মন্দিরের ভিতর চিঠিটি পড়ে থাকতে দেখেন পুরোহিত রামপ্রসাদ চক্রবর্তী সঞ্জয়। চিঠির বিষয়টি কাউকে জানালে পুরোহিতকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা করা হবে বলে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

চিঠি পাওয়ার পর প্রথমে হুমকিদাতাদের ভয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন পুরোহিত। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের পরামর্শে তিনি বিষয়টি বরগুনা সদর থানা এবং পুলিশ সুপার বিজয় বসাককে অবহিত করেন। পরে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন তিনি।

পুরোহিত রামপ্রসাদ চক্রবর্তী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চিঠি পাওয়ার পর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মন্দিরের পাশেই থাকেন রামপ্রসাদ। হুমকির খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুও ওই মন্দির পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়কে অভয় দেন। বরগুনা জেলার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, ইতিমধ্যে তিনি মন্দির এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার বলেন, বরগুনার অনেক মন্দিরে নয়, কালিবাড়ী মন্দিরসহ দুটি মন্দিরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে সব মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. হুমায়ুন কবির পিপিএম জানান, জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় বিভাগের সব পুলিশ সুপারকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) মুখপাত্র গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার ফরহাদ সরদার জানান, নগরীর প্রবেশদ্বারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্পর্শকাতর বিভিন্ন স্থাপনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ নগরীর সর্বত্র পোশাকধারী ও সাদা পোশাকি পুলিশের তত্পরতা বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর