শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
জঙ্গি অর্থায়ন

খতিয়ে দেখা হচ্ছে বৈদেশিক লেনদেন

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি সব ব্যাংকে

আলী রিয়াজ

জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকাতে সব বৈদেশিক লেনদেন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশ থেকে দেশে আসা রেমিট্যান্স, এলসির অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে এক থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত আসা অর্থের উৎস ও ব্যবহার সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে শতাধিক সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা সব ধরনের লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সবগুলো ব্যাংককে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকাতে চাইলে সব ধরনের বৈদেশিক লেনদেনকারীর বিস্তারিত তথ্য নিতে হবে। এরা বিভিন্ন উপায়ে অর্থ আনে। ব্যাংকিং চ্যানেলে এর বড় একটি অংশ আনছে বলে আমারও ধারণা। তবে অবৈধ উপায়েই তারা বেশি আনছে। বিশেষ করে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট বা মৌলবাদী একটি দলের শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে এবং যাদের অনেক বেশি বেতন দেখানো হয়- তাদের বেতনের অর্থের একটি বড় অংশ জঙ্গিদের কাছে চাঁদা হিসেবে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এটা খতিয়ে দেখতে পারে। যেসব শিক্ষিত ছেলেরা হারিয়ে গেছে তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্ত করতে হবে। ব্যাংকের বাইরে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ  করা হলে সেটা বেশি কার্যকর হবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রেমিট্যান্সের নামে দেশে আসা এক থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থের উৎস কোথায় ও দেশে আসার পর এই অর্থ কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে- সেটা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসব অর্থ দেশে এসেছে প্রাথমিকভাবে সব গ্রাহককে নজরদারিতে আনা হয়েছে। গ্রাহক সম্পর্কে জানতে ব্যাংকগুলোকে আলাদাভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অর্থ আনা হয়েছে— এমন চিহ্নিত শতাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জঙ্গিদের কাছে অর্থ আসতে পারে বলে সন্দেহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী আছে তাদের অ্যাকাউন্টের লেনদেন সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। এমন শিক্ষার্থীদের একাধিক অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ আসছে বাংলাদেশে। সেসব অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা ক্রেডিট পরিবর্তন করে দেশের বাইরে যাচ্ছেন তাদের নেওয়া অর্থ সম্পর্কেও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসার নামে বিভিন্ন দেশ থেকে এলসির মাধ্যমে আনা পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। যাদের নামে এসব পণ্য আসছে তারা দেশের বাজারে বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করছে। যার একটি বড় অংশ জঙ্গি অর্থায়নে ব্যয় করা হচ্ছে। ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে আনা হলেও ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। গত এক বছরে এক কোটি থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত এলসির মাধ্যমে পণ্য এসেছে এ রকম একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে। এর মধ্যে বিভিন্ন খেলনা, বস্ত্র, সুগন্ধি স্প্রে, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ রয়েছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করে কম অর্থ ব্যবহার করায় কারও কোনো সন্দেহ হয়নি এত দিন। যারা এসব পণ্য আনছেন তারা ব্যাংকে লেনদেন করছেন খুব সতর্কতার সঙ্গে। সময়মতো তারা এলসির অর্থ পরিশোধ করে দেন। সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশে জঙ্গি হামলার ঘটনায় এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কম মূলধন দেখিয়ে দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে আন্ডার ইনভয়েস, ওভার ইনভয়েস করে অর্থ লেনদেনের তথ্য নিয়ে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত গ্রাহকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে আমাদের নজরদারি সব সময় খুবই কঠোর। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। সম্প্রতি জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হলেও অর্থায়ন নিয়ে সেভাবে কোনো সমস্যা হয়নি। যারা স্টুডেন্ট ভিসায় দেশের বাইরে যায় তাদের নির্দিষ্ট লিমিট দেওয়া আছে। সংশ্লিষ্ট দেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের ওই প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি বা অন্যান্য ফি একসঙ্গে নেওয়ার সুযোগ নেই। ধাপে ধাপে নিতে পারে। বৈদেশিক লেনদেনের ব্যাংক শাখাগুলোও নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে অর্থ আদান-প্রদান করে না। ফলে এসব অর্থ জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ খুব কম। আমরা যদি এখন এটাকে আরও কঠোর করি সেক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে। তবে আমরা বিষয়টির ওপর নজর রাখছি। এমন অভিযোগ যদি আরও পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে নীতিমালা পরিবর্তন অথবা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। সাম্প্রতিক সময়ের সবগুলো অভিযোগও আমরা খতিয়ে দেখেছি। সব ব্যাংক শাখায় আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। সন্দেহজনক লেনদেন হলেই নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ব্যাংকের অন্যান্য মাধ্যমে লেনদেনের বিষয়েও সবাইকে সচেতন থাকার নির্দেশ দেওয়া আছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর