শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়ায় জমি রেলের প্লট বিক্রি আওয়ামী লীগ নেতাদের

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় জমি রেলের প্লট বিক্রি আওয়ামী লীগ নেতাদের

কুষ্টিয়ার হালসায় রেলের জায়গা দখল করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসায় উদ্ধার করা রেলওয়ের কয়েক কোটি টাকার জমি ফের বেদখল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি সিন্ডিকেট এসব সম্পত্তি দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল বারি টুটুল।

প্লটবাণিজ্য সিন্ডিকেটের একজন মোশাররফ হোসেন। তিনি সম্প্রতি জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। মোবাইল ফোনে এই নেতার সঙ্গে কথা হলে জানান, ‘টুটুল ভাইয়ের নেতৃত্বে সবকিছু হচ্ছে। নিজেদের দলের ছেলেরাই এসব জায়গা দখল করে নিচ্ছে। এসব জায়গায় দোকান নির্মাণ করা হবে।’ বৃহস্পতিবার দখল হওয়া এসব জায়গায় খুঁটি পোঁতা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই নেতা আরও বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।’ টাকা কে নিচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘এতসব বিষয় তো বলা যায় না।’ জানা গেছে, হালসা বাজারসংলগ্ন স্টেশনের কয়েক বিঘা জমির ওপর রেলওয়ে পাকশী জোনের এক তলাবিশিষ্ট নয়টি কোয়ার্টার ছিল। রেল কর্তৃপক্ষ এসব কোয়ার্টারকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও এগুলোয় কয়েকটি অসহায় ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে আসছিল। এসব কোয়ার্টারে মাদক ব্যবসাসহ অনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি রেলের পাকশী জোনের কর্মকর্তারা কোয়ার্টারগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে ভবনগুলো ভেঙে ফেলার কাজ পান পাবনার একজন ঠিকাদার। পরে ওই ঠিকাদারের কাজটি কিনে নেন আমবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল বারি টুটুল। জানা গেছে, টুটুল ইতিমধ্যে সব ভবন ভেঙে নিয়েছেন। এখন তার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট রেলওয়ের উদ্ধার হওয়া জমি প্লট আকারে দলীয় লোকদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। দখল প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা মোশাররফ হোসেন মুসা আরও বলেন, উদ্ধার হওয়া রেলের এসব জমিতে খুঁটি পোঁতা হয়েছে। কংক্রিটের পিলার তুলছে কেউ কেউ। তিনি ছাড়াও সাবু ডাক্তার, আহমদ আলী, হারুন, জাহাঙ্গীর, আশরাফুলসহ এলাকার আরও বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এসব প্লটের ভাগ পেয়েছেন। ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট করে জায়গা দেওয়া হচ্ছে সবাইকে। এজন্য ৫০ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে সবাইকে। আবদুল বারি টুটুল বলেন, ‘ঠিকাদারই ভাঙছেন, আমরা ইটগুলো কিনেছি। যার যার দখলে ছিল তারাই প্লট করছেন। কেউ না কেউ অবৈধভাবে দখল করে ছিল। সারা বাজারই অবৈধভাবে ছিল।’ প্লট বা দোকান আকারে বিক্রির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘রাজনীতি করি বলে বিরোধী লোকজন এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। রেলওয়ের পাকশী জোনের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী (১) আবু জাফর মিয়া বলেন, কোয়ার্টারগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সেখানে অবৈধভাবে কয়েকটি পরিবার বাস করত। তা ছাড়া কোয়ার্টারগুলোয় মাদক বিক্রিসহ অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। এজন্য দরপত্রের মাধ্যমে একজন ঠিকাদারের কাছে কোয়ার্টারগুলো ভেঙে মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যারা কাজ পেয়েছেন তারাই ভাঙছেন। ওই সম্পত্তি প্লট আকারে বিক্রি করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা কেউ করতে পারে না। এলাকার কিছু লোক কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে উদ্ধার হওয়া রেলের এসব জায়গা সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে দরখাস্ত দিয়েছেন। ওই অভিযোগে দখলকারী লোকজেনর নাম ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে এ অভিযোগ ডাকযোগে রেলের দফতরে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর