শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার সংশয় উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে

পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে না অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী

আকতারুজ্জামান

শিক্ষাজীবনের ১২টি সিঁড়ি পার হয়ে এবার নতুন যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন সদ্য এইচএসসি উত্তীর্ণরা। এ যুদ্ধ মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে সুযোগ পেতে কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে খোদ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরই। ২০১৬ সালের এইচএসসিতে পাস করেছেন ১২ লাখ ৩ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। অথচ সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে মাত্র ৪৫ হাজারের মতো। এ ছাড়া মেডিকেল ও ডেন্টালে প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসন রয়েছে ৪ হাজার ৩০০। সব মিলে এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাই এসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় দফায় ভর্তি পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। যদিও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দাবি করছেন উচ্চশিক্ষার আসন নিয়ে কোনো সংকট হবে না ছাত্র-ছাত্রীদের। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, সবাই ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে না। সব মিলে প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তিযুদ্ধে নামবেন। সে হিসেবে সিংহভাগ শিক্ষার্থীই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সোনিয়া সুরভী ও নীলফামারীর সৈয়দপুর কারিগরি কলেজের কামরুন্নাহার কেয়া বলেন, ‘এতদিন চেষ্টা ছিল কীভাবে এইচএসসিতে ভালো ফল করব। আর এখন যুদ্ধে নামতে হবে কীভাবে সরকারি মেডিকেলের অল্প কয়টি আসনের মধ্যে স্থান করে নেব।’ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ (২০১৪) প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৩৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে প্রথম বর্ষের ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে মাত্র ৪০ হাজার ৭২৭টি। তবে ইউজিসির সূত্রমতে, বর্তমানে ৩৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চলছে। বাড়তি তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে পারবেন আরও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত বার্ষিক হেলথ বুলেটিন-২০১৫-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরকারি মেডিকেল কলেজে ৩ হাজার ৭২৯ ও ডেন্টালে ৫৩২টি আসন রয়েছে। এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মূলত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের আগ্রহের তালিকায় থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসনের জন্য গড়ে ১০০ বা তারও বেশি শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল মিলে আসন রয়েছে ৭ হাজার ৩০৫টি। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের আগ্রহের তালিকায় রয়েছে বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানগুলো। ইউজিসির সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী ৭৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৫৮টি। ইউজিসি সূত্র আরও জানায়, দেশে বর্তমানে ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এই ১০টিতে আরও প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভালো মানের ৮-১০টি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাকি বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ভর্তি হন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজের স্নাতক পাস ও সম্মান কোর্সে। সূত্রমতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোয় প্রথম বর্ষের জন্য আসন রয়েছে ৬ লাখ ৮ হাজার ৪০৮টি। দেশের বিপুল শিক্ষার্থীর ভর্তির জায়গা একমাত্র সম্বল এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে ৬০ হাজার ৪৭৫টি।

সর্বশেষ খবর