আর্ট গ্যালারির দেয়ালজুড়ে তিনি। নানা ভঙ্গিমায় বঙ্গবন্ধুর ছবি। কোথাও তিনি বক্তৃতারত, কোথাও স্মিত হাসি মুখে। আবার কোনো ছবিতে গভীর চিন্তামগ্ন, চশমা হাতে ভ্রু কুঁচকে নির্নিমেষ দৃষ্টি কোথাও সুদূরে প্রসারিত। কোনোটিতে গায়ে সাদা চাদর জড়িয়ে হাসছেন, কোথাও ডান হাত প্রসারিত করে স্বাগত জানাচ্ছেন, কোথাও বা আয়েশি ভঙ্গিতে পাইপ টানছেন— এমন নানা ভঙ্গি ও অভিব্যক্তির বঙ্গবন্ধুকে চিত্রপটে সাবলীলভাবে তুলে এনেছেন শিল্পীরা। রাজধানীর মহাখালীর গ্যালারি কসমসে বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করে এমন ৮০টি ছবি স্থান পেয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধান অতিথি হিসেবে এসব শিল্পকর্মের উদ্বোধন করেন।
গ্যালারি ঘুরে দেখা গেছে, তুলির আঁচড়ে আঁচড়ে উদ্ভাসিত জাতির পিতা। যতগুলো ছবি আঁকা হয়েছে তার সবই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। জাতিকে যে মহান নেতা মুক্তি এনে দিয়েছেন, দিয়েছেন স্বাধীনতার স্বাদ; তুলির আঁচড় দিয়ে ক্যানভাসে তাকে রাঙানো হয়েছে। আবার হাস্যোজ্জ্বল বাবা-মেয়ের চিত্রটিও সবার দৃষ্টি কেড়েছে। শিল্পী রতনেশ্বর সূত্রধর রংতুলিতে সেই ছবির পট এঁকেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তার হাতের নিপুণ দক্ষতায় আলোকোজ্জ্বল হয়েছে। চিত্রপটে নানা অভিব্যক্তির বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই শিল্পীর আঁকা একক প্রদর্শনী চলছে কসমস গ্যালারিতে। আর্ট অ্যাগেইনস্ট টেররিজম : ব্রেভ হার্ট শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুসহ যারা নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তাদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শিল্পী প্রতিকৃতিগুলো এঁকেছেন প্রধানত তেলরঙে। অ্যাক্রেলিকের কাজও রয়েছে। এ প্রদর্শনী চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
জহির রায়হানের জন্মদিনে উদীচীর চলচ্চিত্র উৎসব : সাধারণ মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামে চলচ্চিত্র মাধ্যমকে আরও বেশি করে কাজে লাগানোর প্রত্যয় নিয়ে উদযাপিত হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব’।সংগঠক জহির রায়হানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল কেন্দ্রীয় গণ গ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজন করে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদ। সকাল ১০টায় উৎসব উদ্বোধন করেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসিন মুরাদ। উদ্বোধনী পর্বের পর মিলনায়তনের ভিতরে প্রদর্শিত হয় জহির রায়হান নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’, প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’, সেন্টু রায় নির্মিত জহির রায়হানের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জহির রায়হান’ ভারতীয় নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘এ লেটার টু মাই ডটার’, ও কামার আহমাদ সাইমন নির্মিত আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শুনতে কি পাও’।
জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উৎসবের উদ্বোধক চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসিন মুরাদ। আর সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী ও সংগঠনের ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ। উদ্বোধন পর্ব শেষে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী, সহসভাপতি শংকর সাঁওজাল, জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা মশিউদ্দিন শাকের। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে চালানো বোমা হামলা থেকে শুরু করে ২০০৫ সালে উদীচী নেত্রকোনা জেলা সংসদ কার্যালয়ে চালানো বোমা হামলার ঘটনা পর্যন্ত সংঘটিত বোমা হামলাগুলোর প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্ষতচিহ্ন’ প্রদর্শিত হয়। এ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছে উদীচী কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগ।
শিশু একাডেমিতে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের সমাপনী : শিশু একাডেমিতে শেষ হলো জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকীর ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা।
গতকাল বিকালে সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি।