শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

টাকা নেই, স্ত্রীর লাশ কাঁধে ১২ কিলোমিটার

কলকাতা প্রতিনিধি

টাকা নেই, স্ত্রীর লাশ কাঁধে ১২ কিলোমিটার

নিজের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না, পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অ্যাম্বুলেন্স দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে হাসপাতাল থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন স্বামী। এই কাণ্ডটি করেছেন উড়িষ্যার কালাহান্দি জেলার আদিবাসী বাসিন্দা দানা মাঝি (৪৮)। দানা মাঝির স্ত্রীর নাম আমাঙ্গ দেবী (৪২)। তিনি কালাহান্দি জেলার থুয়ামুল রামপুর ব্লকের মেলঘরা গ্রামের বাসিন্দা। টিবি (টিউবার কিউলেঅসিস) রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে গত মঙ্গলবার সকালে পাটনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকালের দিকে তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন্ন হয় এবং পরে রাত ১টায় তিনি মারা যান। তার লাশ বয়ে নেওয়ার জন্য কোনো গাড়ির ব্যবস্থা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না স্বামী দানা মাঝির। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েও কোনো ফল হয়নি। তখন বাধ্য হয়ে বুধবার ভোরে দানা মাঝি নিজের কাপড়ে স্ত্রীর লাশ মুড়িয়ে কাঁধে তুলে নেন। তারপর হাঁটতে থাকেন বাড়ির পথে। এ সময় তার সঙ্গে ছিল বড় মেয়ে সানাদেই মাঝি (১২)। জানা গেছে, সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ সাগাদা গ্রামের কয়েক বাসিন্দারা দেখতে পান দানা মাঝি অতি কষ্টে টলমল পায়ে কাঁধে লাশ নিয়ে হাঁটছেন। তখনই তারা ছুটে আসেন দানাকে সাহায্যের জন্য। ওই সময় স্থানীয় সাংবাদিক অজিত সিংও বিষযটি দেখেন। পরে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যখন দেখলাম খুব কষ্ট করে দানা স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন, তখনই আমরা জেলা কালেক্টর এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিষয়টি জানাই। কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে না আসায় লানজিগরের বিধায়ককে জানাই। পরে তিনিই এক প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে লাশ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি লাশ সৎকারের জন্য দানাকে রেডক্রস তহবিল থেকে ১০ হাজার রুপি সাহায্য করা হয়’। দানা মাঝি বলেন, ‘আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করতে আর্জি জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এরপরই ঠিক করলাম কাঁধে করে স্ত্রীর লাশ গ্রামের শ্মশানে নিয়ে যাব’। জানা গেছে, উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের মহাপ্রয়াণ প্রকল্প অনুযায়ী বিনামূল্যে লাশ বহন করার জন্য নিয়ম চালু থাকলেও দানা মাঝির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। কালাহান্দি সদর হাসপাতালে অব্যবহূত অবস্থায় একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স পড়ে থাকলেও  সেটাকেও কাজে লাগানো হয়নি। তবে কালাহান্দি জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রজ কিশোর ব্রম্ম দাবি করেছেন, ‘আমাদেরকে বিষয়টি না জানিয়েই দানা মাঝি লাশ নিয়ে চলে গেছে।’ এদিকে গণমাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। উড়িষ্যার ক্ষমতাসীন দল বিজু জনতা দলের সংসদ সদস্য কালিকেশ সিং দেও ট্যুইট করে জানান, ‘আমি এরই মধ্যে স্থানীয় মন্ত্রীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছি’।

সর্বশেষ খবর