শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সিঙ্গাপুরে ১০ বাংলাদেশির জিকা ভাইরাস শনাক্ত

প্রতিদিন ডেস্ক

সিঙ্গাপুরে বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের খবর আসার পর সেখানে অন্তত ১০ বাংলাদেশি মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে হাইকমিশন।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘এ পর্যন্ত যাদের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের মধে?্য ১০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়  আমাদের জানিয়েছে।’ খবর বিডিনিউজের। তিনি জানান, আক্রান্তদের সবার ক্ষেত্রেই রোগের লক্ষণ দেখা গেছে মৃদু মাত্রায়। তারা হয় ইতিমধ্যে সেরে উঠেছেন, নয় তো সেরে উঠছেন। মাহবুব উজ জামান জানান, রোগীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে তাদের পরিচয় সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশ হাইকমিশন এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বলেও জানান তিনি। গত বছর ব্রাজিল ও আশপাশের দেশগুলোয় জিকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকার কারণে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। এর তিন মাসের মাথায় সিঙ্গাপুরে প্রথম জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ব্রাজিল ভ্রমণে গিয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হন। শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক মালয়েশীয় নারীর সিঙ্গাপুরে এসে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত তারা ১১৫ জনের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আসা নির্মাণশ্রমিক। আক্রান্ত সবাই সিঙ্গাপুরের একই অঞ্চলের বাসিন্দা বা একই এলাকায় কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল বলছে, সিঙ্গাপুরের জিকা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটায় শহরটিকে তারা গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় যুক্ত করেছে।

জিকার লক্ষণ : প্রতি পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজনের মধ্যে হালকা জ্বর, চোখে লাল হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া, মাথাব্যথা, হাড়ের গিঁঠে ব্যথা ও চর্মরোগের লক্ষণ দেখা যায়। বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমেও ভুগতে পারেন; এর ফলে সাময়িক পক্ষাঘাত কিংবা ‘নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডার’-এর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

গর্ভবতী মা মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি। এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম ও বেশি করে তরল খাবার খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাস ধরা পড়ে। এতে সচরাচর মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায় না। তবে এর লক্ষণও সব সময় স্পষ্ট থাকে না। তবে কোনো গর্ভবতী নারী জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার গর্ভের শিশু ‘ছোট মাথা’ নিয়ে জন্মাতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় শিশুদের এ অবস্থাকে মাইক্রোসেফালি বলে। মাতৃগর্ভে থাকার সময় মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত শিশুর মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণরূপে হয় না। ফলে ওইসব শিশু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এমনকি জন্মের পরপর তার মৃত্যুও হতে পারে। জিকা ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়। তবে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকা সংক্রমণের কয়েকটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে ধরা পড়েছে। গত মার্চে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির রক্তের পুরনো নমুনায় জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছে জাতীয় রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জিকা নিয়ে এখনই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি। তবে এ ভাইরাস ঠেকাতে হলে মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটি করতে হবে প্রতিটি বাড়িতে; কারণ এডিস মশা ঘরের মধ্যে ফুলদানি বা পাত্রে জমানো পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে।

সর্বশেষ খবর